পাউরুটি কেটে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শাস্তি হিসেবে পড়তে হবে জাতির পিতার বই
পাউরুটি কেটে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন এবং সেই ভিডিও লাইভের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার মামলায় মাদ্রাসার দুই শিক্ষককে এক বছর বঙ্গবন্ধুর লেখা তিনটি বই পড়ার শাস্তি দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার দুপুরে এ রায় ঘোষণা করেন রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক মো. জিয়াউর রহমান।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার বৈরতলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মোহা. আব্দুস সালাম ও একই মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক গোলাম কবির। মামলার অপর নয় আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইসমত আরা বলেন, ‘দুই শিক্ষক এক বছরের জন্য আদালতের নিয়োগকৃত একজন প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে থাকবেন। এ সময়ে তাঁদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ‘আমার দেখা নয়াচীন’ সহ পাঁচটি বই পড়তে হবে। একই সঙ্গে তাঁরা নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বইগুলো পড়ে শোনাবেন এবং ১০টি করে বনজ ও ফলদ গাছ রোপণ করবেন।’
অ্যাডভোকেট ইসমত আরা আরও বলেন, ‘গত বছরের ১৭ মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার বৈরতলা দাখিল মাদ্রাসায় দশ টাকা দামের পাউরুটি কেটে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালন করা হয়। এ নিয়ে একটি ভিডিও ভাইরাল হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় জনস্বার্থে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী ইউনুস আলী মাদ্রাসা সুপারসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। পুলিশ মামলার তদন্ত করে একই বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর ১১ জনের বিরুদ্ধেই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। মামলায় সাতজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ১১ জন আসামির মধ্যে মাদ্রাসার সুপার আব্দুস সালাম ও সহকারী শিক্ষক গোলাম কবিরের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১/৩১ ধারার অপরাধ প্রমাণিত হয়। তবে তাঁদের সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় এনে বিচারক শাস্তির পরিবর্তে বঙ্গবন্ধুর লেখা তিনটি বইসহ পাঁচটি বই পড়ার শর্তে প্রবেশন মঞ্জুর করে মুক্তি দেন। মামলার অপর নয় আসামির দোষ প্রমাণ না হওয়ায় বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।’
অ্যাডভোকেট ইসমত আরা বলেন, ‘সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতগুলোর মধ্যে এটিই প্রথম প্রবেশন। আসামিরা আপাতদৃষ্টিতে মুক্তি পেলেও আগামী এক বছর আদালতের নজরদারিতে থাকবেন। আদালতের শর্ত ভঙ্গ করলে ও আচরণ সন্তোষজনক না হলে তাঁদের প্রবেশন আদেশ বাতিল হবে এবং শাস্তি হিসেবে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১/৩১ ধারায় প্রত্যেক অপরাধের জন্য এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে ৩০ দিন বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করবেন।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শারমীন কানিজ বলেন, ‘ফৌজদারি মামলার বাইরে প্রবেশনের বিধান একটি যুগোপযোগী উদ্যোগ। আমি আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট। আশা করি প্রবেশনপ্রাপ্ত আমার দুই মক্কেল আদালতের শর্ত সঠিকভাবে পালন করে মামলা থেকে মুক্তি পাবেন।’