পানির দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে ওয়ার্কার্স পার্টির সমাবেশ
রাজশাহীতে ওয়াসার পানির দাম তিনগুণ বাড়ানোর প্রতিবাদে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ওয়ার্কার্স পার্টি। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন দলের নেতারা।
গত মাসের শুরুর দিকে পানির দাম আগের মূল্যের তিন গুণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় রাজশাহী ওয়াসা। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি মাস থেকে নগরবাসীকে ওয়াসার পানির অতিরিক্ত তিন গুণ মূল্য পরিশোধ করতে হবে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের প্রতিবাদ সমাবেশে ওয়ার্কার্স পার্টির নারী সদস্যরা ওয়াসার পানিভর্তি মাটির কলসি হাতে নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যান। কলসির গায়ে লাগানো ছিল বিভিন্ন প্রতিবাদী স্লোগান সংবলিত কাগজ। সেখানে লেখা ছিল ‘ওয়াসার পানি দুর্গন্ধযুক্ত, দাম বৃদ্ধি মানব না,’ ‘ওয়াসার পানিতে মাথার চুল উঠে যায়, দাম বৃদ্ধি মানব না,’ ‘ওয়াসার পানিতে ময়লা থাকে, খাওয়া যায় না, দাম বৃদ্ধি মানব না।’
সমাবেশ থেকে পানির বর্ধিত দাম প্রত্যাহার করা না হলে রাজশাহী ওয়াসা ভবন ঘেরাওয়ের হুমকি দিয়ে বক্তারা বলেন, কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মানুষের স্বার্থের কথা চিন্তা করতে হবে। মনে রাখতে হবে রাজশাহীতে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়নি। শহরকে সাজানো হয়েছে, তবে মানুষের কর্মসংস্থানের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে পানির দাম বাড়ানোর মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চিন্তা করা জরুরি। ওয়াসা তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে মানুষের গণস্বাক্ষর গ্রহণের মধ্যদিয়ে এবং তাদের সঙ্গে নিয়ে দ্রুতই ওয়াসা ভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেওয়া হবে।
সমাবেশে বক্তব্য দেন ওয়ার্কার্স পার্টির মহানগর সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ প্রামানিক দেবু, জেলার সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক তোতা, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, আব্দুল মতিন, মনির উদ্দীন পান্না, নাজমুল করিম অপু, মনিরুজ্জামান মনির, মহানগর সদস্য শাহীনুর বেগম, সাঈদ চৌধুরী, আব্দুল খালেক বকুল, মোশারফ হোসেন, জেলা যুবমৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক মাইনুল ইসলাম, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য কামরুল হাসান সুমন প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, রাজশাহীতে ওয়াসার পানির মান নিয়ে আগে থেকেই নগরবাসীর অসন্তোষ ছিল। সেবার মান না বাড়িয়ে ওয়াসার পানির দাম হঠাৎ তিন গুণ বাড়ানো অযৌক্তিক বলছে নগরবাসী। অনেকের অভিযোগ, ওয়াসার পানি সব সময় ঠিকমতো পাওয়া যায় না। আবার প্রায়ই পানের অযোগ্য পানি সরবরাহ করা হয়। এমন অবস্থায় পানির দাম বাড়ানোর ঘোষণায় তারা ক্ষুব্ধ। ওয়াসার এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে কয়েকদিন ধরে গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ ও সমাবেশ করছে মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টি।
প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, বর্তমান সময়ে সবক্ষেত্রেই পিছিয়ে থাকা একটি অঞ্চল রাজশাহী। এখানকার মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা খুব ভালো নয়। এমন পরিস্থিতিতে কোনোরকম গণশুনানি ও মতামত ছাড়াই পানির দাম এক লাফে তিনগুণ বাড়িয়েছে রাজশাহী ওয়াসা। প্রতিষ্ঠানটির এমন সিদ্ধান্তে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
স্মারকলিপিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে তিন দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো রাজশাহী ওয়াসার পানির দাম তিনগুণ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। শহরের ৩০টি ওয়ার্ডে গণশুনানি করে জনমতের ভিত্তিতে পানির দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে এবং সরকারি প্রণোদনা নিয়ে ওয়াসার সেবার মান উন্নয়নের উদ্যোগ অতি দ্রুত গ্রহণ করতে হবে।