পা দিয়েই সুরাইয়া লিখলেন ভর্তি যুদ্ধের গল্পটা
অটুট লক্ষ্য আর স্বপ্ন জয়ের ইচ্ছা যার আছে, তাঁর জন্য কোনো প্রতিবন্ধকতাই যেন বাধা হতে পারে না। তেমনি একজন অদম্য যোদ্ধা সুরাইয়া জাহান। স্বাভাবিক শিক্ষার্থীর মতো হাতে লেখার শক্তি নেই তাঁর। তবু দমে যাননি। সবার মতোই আজ শনিবার অংশ নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি যুদ্ধে। তবে হাতের বদলে তিনি লিখেছেন পা দিয়ে।
শেরপুর জেলার একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম সুরাইয়ার। জন্ম থেকেই তিনি প্রতিবন্ধী। অকেজো তাঁর দুই হাত। দৃষ্টিশক্তিও নেই সবার মতো। তবু তিনি অদম্য মেধার পরিচয় দিয়েছেন সর্বত্র। এসএসসিতে জিপিএ চার দশমিক ১১ ও এইচএসসিতে পেয়েছেন জিপিএ চার। এরপর প্রস্তুতি নিয়েছেন ভর্তি যুদ্ধে অংশ নেওয়ার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তিনি। পরীক্ষা দিতে নিজ জেলা শেরপুর থেকে ছুটে আসেন ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) কেন্দ্রে।
প্রতিবন্ধী মেয়ে যখন পরীক্ষা দিচ্ছেন, তখন বাইরে অপেক্ষা করছিলেন তাঁর মা মুর্শিদা। মায়ের স্বপ্ন যেন মেয়ের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। মেয়ে শারীরিকভাবে অক্ষম হলেও তাঁর কোনো ইচ্ছাকে ছুড়ে ফেলেনি তাঁর পরিবার। শত প্রতিকূলতাকে তুচ্ছ করে মেয়ের ইচ্ছা পূরণের চেষ্টা চালিয়েছেন মা।
সুরাইয়ার মা মুর্শিদা ছফির গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার মেয়ে জন্মগত প্রতিবন্ধী হলেও আমি তার জন্য কখনও মন খরাপ করিনি। সে এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো ফলাফল করেছে। এবার সে পা দিয়ে লিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। লেখাপড়া করে সে দেশের সেবা করুক, এটাই আমার চাওয়া।’
দেড় ঘণ্টা পরীক্ষা শেষে সব পরীক্ষার্থী চলে যাওয়ার পর মায়ের সঙ্গে পরীক্ষার হল ছাড়েন সুরাইয়া। তখন তিনি গণমাধ্যমকে জানান, পড়ালেখা শেষে একজন অফিসার হতে চান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন কিনা জানতে চাইলে সুরাইয়া আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘হ্যা, চান্স পাব।’
আজ ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা চলার সময়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সবার নজর কাড়েন সুরাইয়া। অনেকেই সুরাইয়ার ইচ্ছা শক্তির প্রশংসা করেন। তারা বলেন, পা দিয়ে লেখা সুরাইয়ার ভর্তি যুদ্ধের গল্পটা।