প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে হাওরে উৎসবের আমেজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা মিঠামইনে আসছেন আগামীকাল মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি)। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে উৎসবের আমেজ ও উদ্দীপনা কাজ করছে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় নেতাকর্মীদের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
আগামীকাল মঙ্গলবার দিনব্যাপী সফরের শুরুতে সকাল ১০টায় কিশোরগঞ্জ সেনানিবাস উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। দুপুরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ ও বিশ্রামের পর বিকেল ৩টায় স্থানীয় হেলিপ্যাড মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দেবেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকে কেন্দ্র করে পুরো হাওর এলাকার মানুষের মাঝে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
এর আগে সর্বশেষ ১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাওর উপজেলা মিঠামইন সফর করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে, টাঙানো হয়েছে ব্যানার ও ফেস্টুন। স্থানীয় হেলিপ্যাড মাঠে নৌকা আকৃতির বিশাল মঞ্চ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই সফর ঘিরে দলীয় নেতাকর্মী থেকে সাধারণ মানুষের বাড়তি আবেগ-উন্মাদনা কাজ করছে। তারা বলছেন, আগে এই এলাকায় শুকনা মৌসুমে হেঁটে চলাফেরা করার কোনো উপায় ছিল না। এখন বিভিন্ন সড়ক নির্মাণ করায় মানুষ অনায়াসে যাতায়াত করতে পারছে। সন্তানসম্ভবাসহ অসুস্থ রোগীদের এখন হাসপাতালে যেতে সুবিধা হয়েছে। কৃষকেরা সময়মতো ফসল বাজারজাত করতে পেরে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন। তাই হাওরবাসী প্রধানমন্ত্রীর আগমনে অত্যন্ত খুশি।
মিঠামইনে আসা ব্যবসায়ী মহসীন মীর বলেন, ‘আমি অষ্টগ্রাম থেকে এসেছি। আগে অষ্টগ্রাম থেকে মিঠামইন আসতে তিন ঘণ্টা লেগে যেত, কিন্তু এখন আমরা মাত্র ২০ মিনিটে আসতে পারি। এই সরকারের আমলে হাওর এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নের কারণে শিক্ষার হার অনেক বেড়েছে, ফসলের উৎপাদন বেড়েছে।’
উপজেলার ঢাকি গ্রামের গৃহবধূ হেনা বেগম বলেন, ‘আগে নৌকা দিয়ে মিঠামইন আসতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা লেগে যেতে। এখন ১০ থেকে ১৫ মিনিটেই আসা যায়। এজন্য আমরা হাওরবাসী প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।’
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, একসময় যোগাযোগ, চিকিৎসা ও শিক্ষাসহ সর্বক্ষেত্রেই পিছিয়ে থাকা জনপদ ছিল এই হাওর এলাকা। টানা তিন মেয়াদে থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অল ওয়েদার সড়ক ও ডুবো সড়ক নির্মাণ, স্কুল-কলেজ সরকারি করায়, বিদ্যুৎ ব্যবস্থার সম্প্রসারণসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের ফলে জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্য ও গতি এসেছে।
কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর আমলে হাওরের এত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। একসময় হাওরে মানুষ আসতে চাইত না, আর এখন দেখতে আসে। প্রধানমন্ত্রীর অবদানের কারণেই এই উন্নয়ন হয়েছে।’
মিঠামইন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার বৈষ্ণব বলেন, ‘একসময়ের পশ্চাৎপদ হাওরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ব্যাপক উন্নয়নের কারণে খেটেখাওয়া মানুষের জীবনমান পরিবর্তন হয়েছে। এজন্য মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ।’
মিঠামইন সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শরীফ কামাল বলেন, ‘ব্যাপক উন্নয়নের কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনের খবরে এই এলাকার মানুষ অত্যন্ত আনন্দিত। এ কারণে জনসভায় গণজোয়ার হবে।’
উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ বলেন, ‘শুকনায় পাও, বর্ষায় নাও—ছাড়া আমাদের একসময় উপায় ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উন্নয়নের কারণেই যোগাযোগ সহজসাধ্য হয়েছে। একসময় হাওর এলাকায় অনেক কৃষিজমি পতিত থাকত। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে ফসলের আবাদ ও ফলন বেড়েছে, সেই সঙ্গে মানুষের কর্মসংস্থান বেড়েছে।’