বঙ্গবন্ধুর ছবির স্বত্ব ব্যক্তির নয়, রাষ্ট্র ও জনগণের : হাইকোর্ট
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবার এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত দুর্লভ ছবির স্বত্ব ব্যক্তির হতে পারে না। বরং তা রাষ্ট্র ও জনগণের মর্মে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামের বইয়ের মেধাস্বত্ব চুরি ও গ্রন্থস্বত্ব জালিয়াতির ঘটনায় করা রিট নিষ্পত্তি করে আজ মঙ্গলবার বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার অনিক আর হক। অন্যদিকে, সাংবাদিক নাজমুল হোসেনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক।
পরে শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, আদালতের রায়ের ফলে বইয়ের লেখার কপিরাইট আমাদেরই থাকছে। তবে, বইয়ের ছবির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি আরও স্পষ্ট ভাষায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে বলা হয়েছে।
এর আগে মুজিববর্ষে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’-এর জন্য আটটি বই কেনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। সেই আটটি বইয়ের মধ্যে তিনটি বই নিয়েই জালিয়াতি করার অভিযোগ ওঠে নাজমুল হোসেন নামের এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে।
এ ছাড়া ‘বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা’ এবং ‘৩০৫৩ দিন’ বইটির পাশাপাশি অধ্যাপক নাসরিন আহমদ সম্পাদিত ‘অমর শেখ রাসেল’ বইটিরও মেধাস্বত্ব চুরি করে মোটা অঙ্কের টাকায় বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ‘জার্নি মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড’ ও ‘স্বাধীকা পাবলিশার্স’ নামের দুটি প্রকাশনা সংস্থার মালিক সাংবাদিক নাজমুল হোসেনের বিরুদ্ধে।
এদিকে, এসব বই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে বিক্রি করা হয়। বইয়ের ছাড়পত্র দেয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তাই, নাজমুল হোসেনের নামে প্রায় ২০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের লোকজনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে উল্লেখ করে বিচার বিভাগীয় অথবা স্বাধীন তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন।
রিটে জালিয়াতির ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং বঙ্গবন্ধুর নামের বইয়ের মেধাস্বত্ব চুরি ও গ্রন্থস্বত্ব জালিয়াতির ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে রুল জারির আর্জি জানানো হয়।
ওই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশ দেন।
হাইকোর্টের আদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা বইয়ের মেধাস্বত্ব চুরি ও গ্রন্থস্বত্ব জালিয়াতির অভিযোগে যমুনা টিভির সিনিয়র রিপোর্টার নাজমুল হোসেনের বিরুদ্ধে স্বাধীন তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে আদালত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিবের নেতৃত্বে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যতম সদস্য মফিদুল হকের সমন্বয়ে এ তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন।