বছর পেরুলেও মেরামত হয়নি সেতু, দুর্ভোগে ১৫ গ্রামের মানুষ
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ি উপজেলায় নির্মাণের দুই মাস না যেতেই স্রোতের টানে ভেঙেপড়া ৩২ লাখ টাকার সেতু এখন জনভোগান্তির প্রধান কারণ।
এক বছরের বেশি সময় ধরে ভেঙে পড়ে থাকলেও এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের নেই কোনো উদ্যোগ। এতে টঙ্গিবাড়ির হাসাইল চরাঞ্চলের ১৫টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতের প্রধান সড়ক পথ এখন বিচ্ছিন্ন। প্রতিদিন নিত্য ও জরুরি প্রয়োজনে পথটিতে চলাচলকারী গ্রামবাসীকে পড়তে হচ্ছে দুর্ভোগে। প্রশাসনের সুদৃষ্টির অভাব আর অবহেলাকেই দায়ী বলছে এলাকাবাসী। এখন হেলেপড়া সেতু ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণের দাবি তাদের।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত বছরের এপ্রিলে টঙ্গিবাড়ি উপজেলার হাসাইল নগরজোয়ার খালের উপর প্রধান সড়কে নির্মাণ করা হয়েছিল সেতুটি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের আওতায় সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয় ৩২ লাখ ৪১ হাজার টাকা। সেতুটি নির্মাণ হলে টঙ্গিবাড়ি উপজেলার চরাঞ্চলের ১৫টি গ্রাম ও পাশের শরীয়তপুর জেলার চরাঞ্চলের পাঁচটি গ্রামসহ মোট ২০টি গ্রামের মানুষের চলাচলের পথ সুগম হয়। তবে নির্মাণের দুই মাস না যেতেই দেখা দেয় বিপত্তি, গত বছরের জুনে বর্ষার পানির স্রোতে ভেঙে একপাশে হেলে পড়ে সেতুটি। ভেঙে যায় সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়কও। এতে সেতুটি চলাচলের একবারেই অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। এরপর এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও একই অবস্থায় পড়ে আছে সেতুটি। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের নেই কোনো উদ্যোগ। এতে দৈনন্দিন চলাচল ও টঙ্গিবাড়ি যাতায়াতে উপজেলার নগজোয়ার, পাচনখোলা, মান্দ্রা, আটিগাঁও, ডাইনগাঁও, হাসাইল, বানারীসহ ১৫ গ্রামের পাশাপাশি শরীয়তপুর জেলার নওপাড়া, জয়বাংলা, চিডারচর, বাবুরচর, ভানাদেশ গ্রামের মানুষের চরম ভোগান্তির কারণ এখন এই সেতু। ভাঙা সেতুটি হয়ে দাঁড়িয়েছে পথের কাঁটা।
স্থানীয় বাসিন্দা শেখ রাসেল ফখরুদ্দিন জানান, শুষ্ক মৌসুমে স্থানীয় এলাকাবাসী পাশের জমি দিয়ে হেঁটে পারি দিলেও এখন বর্ষা মৌসুমে পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে। সেতু ভেঙে যাওয়ায় প্রধান সড়কেও যানবাহন চলতে পারছে না। বিচ্ছিন্ন সড়কের একপাশ থেকে অন্যপাশে যেতে হচ্ছে নৌকায়, গুনতে হচ্ছে ভাড়া।
এলাকার আরেক বাসিন্দা বলেন, সেতু ভেঙে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে স্থানীয় ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল চলাচল। এতে বেকার হয়ে পড়েছে অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেলচালক। তাদের কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে
কোহিনুর নামের এক নারী বলেন, ‘চিকিৎসার প্রয়োজনে উপজেলায় যেতে-আসতে অনেক কষ্ট ও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বৃদ্ধ ও গর্ভবতী নারীদের কষ্ট লাঘবে দ্রুত সেতু চাই আমরা।’
এ ছাড়া নতুন করে সেতু নির্মাণ হলে দুর্ভোগ নিরসনের পাশাপাশি হাজার হাজার মানুষের চলাচলের পথ সুগম হবে। চরাঞ্চলে উৎপাদিত আলুসহ বিভিন্ন খাদ্যশস্য বাজারজাতের ক্ষেত্রে সুবিধা হবে বলে জানায় এলাকাবাসী।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়াম্যানের সুপারিশেই সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেঘলা এন্টারপ্রাইজ সেতু নির্মাণের কাজ পায়। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাব-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেতুর কাজ সম্পন্ন করে। কাজ শেষ হলেও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেতুটি।
হাসাইল বানারী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কুদ্দুস মুন্সি জানান, এলাকার লোকজন বলে অমরা চেয়ারম্যান-মেম্বাররা সেতু ঠিক করি না কেন? কিন্তু এসব কাজ তো আমাদের না। আমরা কী করব?
হাসাইল বানারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হালদার জানান, এ বছরও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কিছু টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তবে সংস্কার করা হয়নি।
এ বিষয়ে যোগযোগ করা হলেও কথা বলতে রাজি হননি টঙ্গীবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা পারভীন।
টঙ্গীবাড়ী ও লৌহজং উপজেলায় দায়িত্বরত প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাজেদা সরকার বলেন, ‘আমি নতুন দায়িত্ব নিয়ে এসেছি। সেতু তৈরি কিংবা ভেঙে যাওয়ার সময় আমি এখানে দায়িত্বে ছিলাম না। বন্যায় পানির স্রোতে সেতুটি ভেঙে পড়েছিল। সেতুর বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’