বরিশালে প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের বৈঠক, ‘সমঝোতা’
বরিশালে ইউএনওর বাসভবনে হামলার ঘটনায় সৃষ্ট দ্বন্দ্ব নিরসনে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের বৈঠক হয়েছে। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৮টা থেকে প্রায় ১১টা পর্যন্ত বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসানের সরকারি বাসভবনে এই বৈঠক হয়। বৈঠকের সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, উভয় পক্ষই ‘ভুল বোঝাবুঝি’ নিরসনের লক্ষে এক ধরনের ‘সমঝোতায়’ পৌঁছেছে।
বৈঠক শেষে রাতে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহসহ পুলিশ বিভাগ এবং প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তোলা একটি গ্রুপ ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের উপস্থিতিও রয়েছে। এতে ধারণা করা হচ্ছে, হয়তো দুপক্ষই বিষয়টি নিয়ে আর বাড়াবাড়ি না করার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।
পরে গভীর রাত ১টার দিকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ শাখা থেকে এ ব্যাপারে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও পাঠানো হয়েছে। সেখানে ‘ভুল বোঝাবুঝি ভুলে’ সামনের দিনে উভয়পক্ষ একসঙ্গে কথা করার কথা বলা হয়।
বৈঠক শেষে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে সেখানে। সিদ্ধান্ত হয়েছে যে বিষয়টি নিয়ে সামনের দিনগুলোয় কোনো বাড়াবাড়ি করবে না দুপক্ষ। মামলাসহ যেসব জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে সেগুলোরও সমাধান করা হবে। তাছাড়া আগামী দিনগুলোয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগ নেতারা মিলেমিশে কাজ করবে এবং কোনো রকম রাগ কিংবা ক্ষোভ ভেতরে পুষে রাখবে না। পরে উপস্থিত সবাইকে আপ্যায়িত করেন বিভাগীয় কমিশনার।’
বরিশালে প্রশাসন, পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে বিরাজমান দ্বন্দ্ব নিরসনে ভেতরে ভেতরে যে একটা চেষ্টা চলছে তার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল গতকাল রোববার দুপুরেই। সচিবালয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রথম সেই ইঙ্গিত দেন। সেসময় তিনি বলেন যে, এটা একটা ভুল বোঝাবুঝি এবং খুব শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
এদিকে বরিশালে ইউএনও এবং কোতয়ালী থানার ওসিসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে পৃথক দুটি মামলার আবেদন জমা পড়লেও সেগুলো এজাহার হিসেবে গ্রহণ না করে তদন্তের জন্য পিবিআইয়ের কাছে পাঠিয়ে দেন বিচারক। সিটি মেয়রের পক্ষে চলমান আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সোমবার বরিশালে বিসিসি কাউন্সিলারদের যে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছিল তাও স্থগিতের ঘোষণা আসে রোববার রাতে। সবমিলিয়ে ভেতরে ভেতরে যে কিছু একটা হচ্ছে তা আঁচ করতে পারছিলেন সবাই।
সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পরে বিভাগীয় কমিশনারের বাসভবনে একে একে প্রবেশ করতে থাকে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের গাড়ি। রাত ১১টার পরে গাড়িগুলো আবার বেড়িয়ে আসে। এরই মধ্যে জানাজানি হয়, সেখানে মেয়রসহ সব কর্মকর্তাদের আপ্যায়িত হওয়ার বিষয়টি। একই সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে বিরাজমান দ্বন্দ্ব দূর করে দুপক্ষের সমঝোতার খবর।
রাত ১২টা নাগাদ একটি ছবিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেখানে দেখা যায়, একই সারিতে হাস্যোজ্বল ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে আছেন সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং বরিশাল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমান।
এক সারিতে দাঁড়িয়ে তোলা ওই ছবিতে আরও রয়েছেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. ইউনুস, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর, বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল আহসান বাদল, রেঞ্জ ডিআইজি আকতারুজ্জামান, পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান, জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। সরকারের উচ্চমহলের আগ্রহেই ওই সমঝোতা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বৈঠক সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। যে গ্রুপ ছবিটি তোলা হয়েছে সেটি ওই উচ্চমহলে পাঠানোর জন্যই তোলা হয়েছে এমনটাও নিশ্চিত করেছে ওই সূত্রটি।
গত ১৮ আগস্ট রাতে উপজেলা কমপ্লেক্সের ভেতরে থাকা ব্যানার অপসারণ নিয়ে বিরোধে জড়ায় আওয়ামী লীগ এবং সদরের ইউএনও মুনিবুর রহমান। সেই ঘটনায় হামলা সংঘর্ষ এবং গুলিবর্ষণে পাঁচজন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয় ক্ষমতাসীন দলের ৩০ নেতাকর্মী। পরে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে প্রধান আসামি করে পৃথক দুটি মামলাও দায়ের করেন ইউএনও ও পুলিশ। যার পাল্টা হিসেবে রোববার বরিশালের আদালতে আবার ইউএনও মুনিবুরসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়েরের আবেদন করেন বিসিসির একজন প্যানেল মেয়র ও একজন কর্মকর্তা। তবে রাতের সমঝোতা বৈঠকের পর এসব জটিলতা কেটে যাবে এমনটাই মনে করছেন সবাই।