বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কবলে রাজশাহী
ভয়াবহ বিদ্যুৎবিভ্রাটের কবলে পড়েছে রাজশাহী অঞ্চল। বিভাগের আট জেলায় কয়েকদিন ধরে চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না নর্দান ইলেকট্রিসিটি পাওয়ার কোম্পানি (নেসকো) লিমিটেড। এতে দিনে রাতে সমানতালে বিদ্যুৎবিভ্রাট হচ্ছে। ফলে আষাঢ়ের চরম গরমে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে রাজশাহীবাসীর জনজীবন।
নেসকো সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৪২১ মেগাওয়াট। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে এর চেয়ে কম। শনিবার থেকে রাজশাহী বিভাগ বিদ্যুৎ পাচ্ছে গড়ে ৩৭৮ মেগাওয়াট। এর মধ্যে শুধু রাজশাহী মহানগর এলাকা পাচ্ছে ৬১ মেগাওয়াট। অথচ রাজশাহী মহানগরে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৮২ মেগাওয়াট।
কী কারণে জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদামতো বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না, তার উত্তর জানা নেই নেসকো কর্মকর্তাদের। কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে, সেটিও জানাতে পারছেন না তারা। নেসকো বলছে, জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এক দিকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখে অন্য দিকে সরবরাহ করা হচ্ছে।
দুর্বিষহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করছে অনেকে। সুজাউদ্দিন ছোটন নামের একজন তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘রাত ১২টা থেকে চারবার বিদ্যুতের লোডশেডিং হলো। দিনে হয়েছে আরও অনেকবার। সকাল থেকে কী হবে, কে জানে!’
নগরবাসীর অভিযোগ, বিদ্যুতের সমস্যা নিয়ে জানতে নেসকোর হটলাইনে ফোন করা হলেও তা রিসিভ হয় না।
নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকার হাসিনা পারভীন জানান, কয়েকদিন ধরে দিনে-রাতে সবসময় লোডশেডিং চলছে। একবার বিদ্যুৎ গেলে এক থেকে দেড় ঘণ্টার আগে ফেরে না। আবার ঘণ্টা দেড়-দুয়েক থেকে আবার চলে যায়। এতে এই ভ্যাপসা গরমে সবাইকে নাজেহাল হতে হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, শনিবার দিনগত রাত ২টার পর থেকে তাদের এলাকায় লোডশেডিং শুরু হয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঁচ-ছয়বার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়েছে। প্রতিবার এক থেকে দেড় ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ আসছে না। ফলে রাতে তারা গরমে ঘুমাতে পারছেন না। আবার দিনেও একই পরিস্থিতি। দিনে চরম গরমে রান্নাবান্নার কাজও ঠিকমতো করা যাচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহর থেকে গ্রামে সমানতালে বিদ্যুতের সংকট দেখা দিচ্ছে। লোডশেডিংয়ের কারণে শহরের ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বন্ধ থাকছে কল-কারখানার মেশিন ও যন্ত্রপাতি। বিভিন্ন দপ্তরে গরমের মধ্যে বসে কাজ করতে হাঁসফাঁস করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিদ্যুতের এই সমস্যা নিয়ে জানতে নেসকো কার্যালয়ে ফোন করেও কোনো লাভ হচ্ছে না।
নেসকোর রাজশাহী অঞ্চলের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ বলেন, ‘জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদা মতো বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই লোডশেডিং করতে হচ্ছে। সমস্যাটা কী সেটা আমরাও জানি না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদের জানাতে পারেননি। তাই কবে সমস্যার সমাধান হবে, সেটাও বলতে পারছি না।’