বিমানের এমডির কক্ষ থেকেই প্রশ্ন ফাঁস : ডিবি
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কক্ষ থেকেই নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে দাবি করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস, পরীক্ষা বাতিল ও সার্বিক তদন্তে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা (লালবাগ) বিভাগ। গ্রেপ্তার ১০ জনের মধ্যে নয় জনের দেওয়া জবানবন্দিতে স্পষ্ট হয়েছে যে, এমডির কক্ষ থেকে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫০ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য মিলেছে। উদ্ধার করা হয়েছে আরও অনেক ব্ল্যাঙ্ক চেক।’
পুলিশের (ডিবি) প্রধান বলেন, ‘বিমান বাংলাদেশের এমডির কক্ষ থেকে প্রশ্ন ফাঁস করেছেন জাহিদ নামে একজন অফিস সহকারী। নিয়োগ পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে একটি কমিটি রয়েছে। তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি। এখানে অনেক লোকের চাকরি হওয়ার কথা। তাঁরা দায় এড়াতে পারেন না।’
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ আরও বলেন, ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নিয়োগ পরীক্ষার আগের দিন প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যায়। প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতির ঘটনায় গত ২১ নভেম্বর ডিবি লালবাগ প্রথম দিনই বিমানবন্দরের কাউলা থেকে আওলাদ হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, এনামুল হক, হারুন অর রশিদ ও মাহফুজুল আলম নামে বিমান বাংলাদেশের পাঁচ কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রশ্নের সফট কপি, টাকা, ব্যাংকের চেক, স্ট্যাম্পসহ বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করা হয়।’
এরপর প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের আরও পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা হলেন—মো. মাসুদ, জাহিদ হাসান, সমাজু ওরফে সোবহান, জাবেদ হোসেন ও জাকির হোসেন।
ডিবি প্রধান হারুন বলেন, ‘গ্রেপ্তার ১০ জনের মধ্যে নয়জন প্রশ্ন ফাঁসে নিজেদের ও অন্যদের দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তাঁরা প্রশ্নফাঁসের যাবতীয় অপকর্মের বিবরণ দিয়েছেন। কীভাবে তারা প্রশ্ন ফাঁস করেছে, কার কাছে দিয়েছে; কত টাকা নিয়েছে, সবই আমরা জেনেছি।’
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘পরীক্ষা কমিটির প্রধান, জিএম অ্যাডমিনের কক্ষে প্রশ্ন তৈরি হয়। সেখান থেকে একজন প্রশ্নের ছবি তোলেন। ২০ নভেম্বর বিমানের লোগো মুছে ফেলে ৮০টি প্রশ্ন টিকচিহ্ন দিয়ে আরও দুজনের কাছে সরবরাহ করে। ওই দুজন মোটরসাইকেলযোগে চলে যায়। আবার ১৯ নভেম্বরের সামারাইজ প্রশ্নের ফটোকপি এমডির অফিস সহকারী জাহিদ হোসেনের দায়িত্বে দেওয়া হয়। তিনি স্মার্টফোন সঙ্গে নিয়ে গিয়ে ফটোকপির সময় ছবি তুলে সোবহানের কাছে পাঠিয়ে দেন। সোবহান সরবরাহ করেন আরও কয়েকজনের কাছে।’
গ্রেপ্তার কোনো আসামির জবানবন্দিতে এমডির নাম এসেছে কি না জানতে চাইলে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘যাদের দায় আছে, তাদেরই আইনের আওতায় আনা হবে। মামলার তদন্ত ও নিষ্পত্তির স্বার্থে প্রয়োজনে আরও অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’