বোনের সাবেক স্বামীর হাতে ‘শ্লীলতাহানি’, ইবি ছাত্রীর ‘আত্মহত্যা’
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/10/02/3fxqk5t3.jpg)
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার শেখপাড়া গ্রামের বাসা থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক ছাত্রীকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছেন স্বজনরা। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ছাত্রীর নাম উলফাত আরা তিন্নি (২৪)। তিনি শেখপাড়া গ্রামের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ আলীর ছোট মেয়ে। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পড়তেন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘তিন্নি তাঁর মা ও বোন মুন্নির সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে তাঁর বোনের সাবেক স্বামী জামিরুল তিন-চারজনকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান এবং তর্কে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে জামিরুল ঘরের মূল্যবান আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন এবং তিন্নির শোবার ঘরে গিয়ে তাঁর শ্লীলতাহানি করেন। জামিরুলের হয়রানির পরে তিন্নি সিলিংয়ের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন।’
তিন্নির খালাতো ভাই মখলেছুর রহমান জানান, শেখপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী জামিরুলের সঙ্গে তিন্নির বড়বোন মুন্নির বিয়ে হয়। বনিবনা না হওয়ায় মুন্নি ও জামিরুলের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। কিন্তু মুন্নিকে ফিরে পাওয়ার জন্য বেপরোয়া হয়ে ওঠেন জামিরুল। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই পিতৃহীন দুই বোনের ওপর নানা সময়ে নিপীড়ন চালিয়ে আসছিলেন।
মখলেছুর রহমান জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে জামিরুল লোকজন নিয়ে মুন্নিদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে ফিরে যান। দুই ঘণ্টা বিরতি দিয়ে রাত আনুমানিক ১২টার দিকে জামিরুল ফের ওই বাড়িতে আসেন ও তিন্নির ওপর নির্যাতন চালান। জামিরুল চলে যাওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলতে থাকেন তিন্নি। তাঁকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
বড় বোন মুন্নির দাবি, পরিকল্পিতভাবে তাঁর ছোট বোনকে হত্যা করা হয়েছে।
মুন্নি অভিযোগ করেন, বাড়ির দোতলায় তিন্নির সঙ্গে জামিরুল এমন কি করেছে যে, মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে তরতাজা বোনের লাশ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখলাম। তিনি অভিযোগ করেন, ‘এটা পরিকল্পিত হত্যা। আমার বোনের সঙ্গে খারাপ কিছু করায় সে আত্মহত্যা করেছে।’
তিন্নির মা হালিমা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে খুবই মেধাবী। বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ঘটনার দিন সে সন্ধ্যার দিকে কুষ্টিয়ায় এক বান্ধবীর বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে বাড়ি ফেরার পথে জামিরুলের হুমকির শিকার হয়। পরে জামিরুল বাসায় এসে ভাঙচুর চালায়। আমাদের সন্দেহ তিন্নিকে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে শৈলকুপা থানার পরির্দশক (তদন্ত) মহসীন আলী বলেন, স্বজনরা রাতেই তিন্নিকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। ওই হাসপাতালেই সুরতহালসহ ময়নাতদন্ত করানো হয়েছে। আজ সন্ধ্যায় গ্রামের কবরস্থানে তিন্নিকে দাফন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত চারজনকে আটক করা হয়েছে। তবে তাদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না। থানায় মামলার দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।