ভাসানচরে যেতে কক্সবাজার ছাড়ল আরও ২২০০ রোহিঙ্গা
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/03/02/bhasanchar.jpg)
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে পঞ্চম দফায় আরও তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গা ভাসানচরে যাচ্ছে। আজ মঙ্গলবার দুপুর এবং বিকেলে দুই দফায় ৪০টি বাসে করে দুই হাজার ২৫৯ জন রোহিঙ্গাকে নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। সেখানে তাদের নৌবাহিনীর হেফাজতে রাখা হবে।
আগামীকাল বুধবার সকালে এসব রোহিঙ্গাদের নৌবাহিনীর জাহাজে করে ভাসান চরে নিয়ে যাওয়া হবে। একইভাবে কক্সবাজারের উখিয়া থেকে বাকি এক থেকে দেড় হাজার রোহিঙ্গা চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হবে। এর আগে চার দফায় নোয়াখালীর ভাসানচরে নেওয়া হয়েছে নয় হাজার ৫৪০ জন রোহিঙ্গাকে।
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ দৌজা নয়ন বলেছেন, ‘আজ মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে আগের মতো উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ এলাকা থেকে ২০টি এবং বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ২০টি বাসে করে দুই ভাগে দুই হাজার ২৫৯ জন রোহিঙ্গাদের চট্টগ্রামের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়।
নয়ন বলেন, ‘আগের চার দফা সফল যাত্রার পর ভাসানচর যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গারা স্ব-স্ব ক্যাম্প ইনচার্জ কার্যালয়ে নাম জমা দিচ্ছে। ভাসানচরের পরিবেশ, থাকা খাওয়ার সুবিধা সম্পর্কে ব্রিফিং করার পর যারা যেতে রাজি হচ্ছে, তাদের নিবন্ধনের মাধ্যমে ভাসানচরে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে। আগামীকাল বুধবারও একই প্রক্রিয়ায় এক থেকে দেড় হাজার রোহিঙ্গাকে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে।’
কক্সবাজারের আরআরআরসি কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার দফায় কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে নয় হাজার ৫৪০ জন রোহিঙ্গা। প্রথম দফায় গত ৪ ডিসেম্বর এক হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে গেছে। এরপর ২৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ধাপে যায় এক হাজার ৮০৫ জন ও তৃতীয় ধাপে দুই দিনে ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি তিন হাজার ২০০ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর হয়।
এছাড়া ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম দিন দুই হাজার ১৪ জন ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ৮৭৯ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরের উদ্দেশে উখিয়া কলেজের অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্প ত্যাগ করে। এভাবে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনায় কাজ করছে সরকার।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা নির্যাতন শুরু হলে পরের কয়েক মাসে অন্তত আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান নিয়েছিল। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১১ লাখ।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে তিন হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
আর উখিয়া-টেকনাফে অবস্থিত আশ্রয়শিবিরগুলো বেশির ভাগ পাহাড়ের ঢালুতে তৈরি। বর্ষার সময় পাহাড়ধসে ঘরবাড়ি বিলীন হয়, হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এছাড়া আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী ও বখাটের উৎপাত বেড়েছে। বেড়েছে খুন, মুক্তিপণের জন্য অপহরণ, ধর্ষণ ও অরাজকতা। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী দলের মধ্যে গোলাগুলিতে রোহিঙ্গাদের মৃত্যু ঘটছে। সাধারণ রোহিঙ্গারাও অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তাই শান্তিকামী রোহিঙ্গারা ঝুঁকি এড়াতে স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছে, এমনটি মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।