ভিকারুননিসার অধ্যক্ষকে অপসারণের দাবি মির্জা ফখরুলের
রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহারের ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর তাঁর অপসারণের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি ফোনালাপের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, অন্যান্য সব প্রতিষ্ঠানের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও সরকার চরম দলীয়করণ এবং অনুগত অযোগ্য ও সন্ত্রাসী ব্যক্তিদের বসিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকেও ধ্বংস করে দিচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্সের সই করা বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে অতীতে স্বনামধন্য, যোগ্য শিক্ষকরাই দায়িত্ব পালন এবং দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, বর্তমান সরকারের আমলে শুরু থেকেই ক্রমাগত নির্লজ্জ দলীয়করণ, ভর্তি বাণিজ্য, অনিয়ম, দুর্নীতি ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের মান-মর্যাদা ধূলিস্যাৎ করে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপালের মতো দায়িত্বশীল পদে ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসী-ক্যাডার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রকাশিত ফোনালাপেই বোঝা যায়, কী তাঁর পরিচয়! কী তাঁর চরিত্র! এরা শিক্ষক নামের কলঙ্ক। এই দলবাজ, সন্ত্রাসী মহিলা যিনি কথায় কথায় ক্ষমতার দাপটে অস্ত্র ও লীগ নামধারী সন্ত্রাসী বাহিনীর হুমকি দেয়, প্রকাশের অনুপযোগী অশ্রাব্য-অশালীন ভাষা ব্যবহার করেন, তাঁর হাতে শিক্ষা, শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্রী, অভিভাবকসহ কেউই নিরাপদ নয়।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, দলবাজ সরকার দলীয় আধিপত্য বিস্তার ও বজায় রাখতে ‘লেডি সন্ত্রাসী’ বসিয়ে এই স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস ও ক্ষমতাসীন দলের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে চায়। ভোটবিহীন সরকারের চরিত্র, ভাষা, ব্যবহার যে ধরনের, তাদের পছন্দের ব্যক্তিরাও একই ধরনের হবে-এটাই স্বাভাবিক।
বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই একই অবস্থা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দলীয় অনুগত, এমনকি নৈতিক স্খলন ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তদের ভিসি বা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে শিক্ষার মর্যাদা ও শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করা হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব অবিলম্বে ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহারকে অপসারণ করে ন্যায়-নিষ্ঠ, ভদ্র, আদর্শবান, সৎ, নির্ভিক ও নির্দলীয় শিক্ষককে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার আহ্বান জানান।
গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকার মিরপুরের দুয়ারীপাড়া সরকারি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ কামরুন নাহারকে প্রেষণে ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয়েছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার এবং অভিভাবক ফোরামের নেতা মীর সাহাবুদ্দিন টিপুর একটি ফোনালাপ। দুজনের ৪ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের এই ফোনালাপ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
ফোনালাপের একপর্যায়ে অধ্যক্ষ কামরুন নাহারকে বলতে শোনা যায়, আমি যেমন শিক্ষক, তেমনি রাজনীতি করা মেয়ে। আমি বালিশের নিচে পিস্তল রাখি। ব্যাগে পিস্তল রাখি। কেউ (কোনো... বাচ্চা) যদি আমার পেছনে লাগে আমি কিন্তু ওর পেছনে লাগব। আমি শুধু ভিকারুননিসা না, আমি তাকে দেশ ছাড়া করব।’
অধ্যক্ষের এমন ফোনালাপে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টরা। এতে বিব্রত হয়েছেন ভিকারুননিসার সাবেক এবং বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও।
এদিকে ফাঁস হওয়া ওই ফোনালাপের অডিওকে ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করেছেন ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ। দুর্নীতি করতে না দেওয়ায় অভিভাবক ফোরামসহ কিছু লোকজন তার পেছনে লেগেছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
অধ্যক্ষ কামরুন নাহার গতকাল তাঁর ফেসবুক পেজে লিখেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত অবস্থায় ছাত্র জীবন থেকে বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে বুকে ধারণ করে রাজপথে মিছিল মিটিং করা সংগ্রামী নারী। মাননীয় নেত্রীর পাশে থেকে সত্যের পক্ষে লড়াই করেছি। তিনি আমার বোন, মা, নেত্রী তথা অভিভাবক। কোন নোংরা ষড়যন্ত্র আর অসততার কাছে মাথা নোয়াতে শিখিনি। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কাণ্ডারী ভিকারুন নিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্রীদের সুযোগ্যভাবে গড়ে তোলাই আমার একমাত্র ব্রত।
যাঁরা নিজের স্বার্থে আঘাত লাগার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে আমার পেছনে লেগে আছেন কিছু না পেয়ে এডিট করে তাঁরা একটি অডিও ছেড়েছেন, যা সম্পুর্ন মিথ্যা ও বানোয়াট।
সন্তানতুল্য কন্যাদের জন্য আর তাঁদের নির্বিঘ্নে সুস্থ পরিবেশে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য কেবলই চিন্তা আর আকুলতা।
একদিন রাজপথে নিজের জীবন বাজি রাখা আমি কোন কিছুতেই ভীত নই, জীবন থাকতে কিছুতেই স্কুলের বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে দিবো না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে আমার এই লড়াইয়ে সতীর্থ আপনাদের পাশে চাই।
সবার জন্য শুভকামনা।’