মুন্সীগঞ্জে জমজমাট তরমুজের হাট, দামে চৈত্রের উত্তাপ
জমে উঠেছে মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর ফলের হাট। সেখানে বসেছে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা হাজার হাজার তরমুজের পসরা।
বেচাকেনা আর হাঁকডাকে এলাকা হয়ে উঠেছে জমজমাট। তবে, রমজানকে কেন্দ্র করে চৈত্রের উত্তাপ ছাড়াচ্ছে এসব তরমুজের দামে। এতে ব্যাপারী ও আড়তদার লাভবান হলেও বিপাকে পড়েছেন খুচরা ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা। তবে, কোনো অনিয়ম হলে প্রতিষ্ঠান সিলগালা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভোক্তা অধিকার কর্মকর্তা।
জানা যায়, হাটের নয়টি আড়তে বর্তমানে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার তরমুজ। কৃষক পর্যায়ে ভালো দাম না পেলেও কয়েক দিনের ব্যবধানে হাটে পিস প্রতি তরমুজে দাম বেড়েছে ৭০ টাকা পর্যন্ত।
সরেজমিনে দেখা যায়, ট্রলার, ট্রাক দিয়ে হাটের আড়তে আসছে বারি, ব্লাক জাম্বু, গ্রিন ডায়ামন্ড, মার্ভেলাসসহ নানা জাতের তরমুজ। ওজনে তিন থেকে ১৪ কেজি। একেকটি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকায়।
মুক্তারপুরে আড়তদার ও ব্যাপারীরা জানান, গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে প্রতি পিস তরমুজের দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৭০টাকা।
আড়তদার-ব্যাপারীরা বলছেন, জমিতে উৎপাদন কম, আর পরিবহণ খরচ বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে তরমুজের দাম। আর, খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি মূল্য বেশি হওয়ায় দাম বেড়েছে।
মায়ের দোয়া আড়তের মো. নাজমুল জানান, গত সপ্তাহে চার কেজি ওজনের প্রতি পিস তরমুজের দাম ছিল ১২০ থেকে ১৩০টাকা। এ সপ্তাহে সেটি হয়েছে ১৮০ টাকা পর্যন্ত। আট থেকে নয় কেজির একশ তরমুজ ছিল ২৫ হাজার টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৫ হাজার টাকা। প্রতি পিস ১১ কেজির ১০০ তরমুজের দাম ছিল ৩৫ থেকে ৩৮ হাজার টাকা। এখন সেগুলো হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। ‘মানুষেরর চাহিদা বেশি, তাই দাম বেশি’ বলেন নাজমুল।
মো. সালাম নামের আরেক ব্যাপারী বলেন, ‘তরমুজ চাষে অনেক খরচ, প্রতি একরে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়। এ বছর ফলন কম।’
হাটে আসা কৃষক রমজান ব্যাপারি বলেন, ‘প্রথমে যাঁরা বিক্রি করেছেন, তাঁদের সব লোকসান হয়েছে। শুনলাম দাম বাড়ছে, তাই নিয়ে এলাম। যদি ভালো দাম পাই।’
পটুয়াখালী থেকে আসা ব্যাপারী মো. নবাব আলী বলেন, ‘১০ থেকে ১২ হাজার তরমুজ নিয়ে এসেছি। এক লাখ বিশ হাজার টাকার শুধু ট্রলার ভাড়া, প্রতিটি তরমুজ নামাতে আরও পাঁচ টাকা লাগে। তা ছাড়া এবার কৃষকদের উৎপাদন কম হয়েছে, এ জন্য তাঁদের কাছ থেকেও বেশি দামে কিনতে হয়েছে। ফলে দাম একটু বেশিই।’
পটুয়াখালি এজেন্সি আড়তের সাইদুল ইসলাম জানান, মুক্তপুর ফেরিঘাট এলাকায় নয়টি আড়ৎ আছে। সেখানে প্রতি আড়তে পাঁচ থেকে সাত হাজার তরমুজ বিক্রি হচ্ছে, যা দিনে ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকা।
খুচরা বিক্রেতা মো শরীফ বলেন, ‘আমাদের পাইকারি কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। তাই খুচরা বাজারে বিক্রিও করে হয় বেশিতে।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আসিফ আল আজাদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এরই মধ্যে মুক্তারপুরে তরমুজের বাজার পরিদর্শন করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের অযৌক্তিক মুনাফা অর্জন নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। তরমুজসহ অন্যান্য ফলের মূল্য তালিকা প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে।’
আসিফ আল আজাদ বলেন, ‘কেউ যদি নিয়ম অমান্য করে তাহলে জরিমান করা হবে। বারবার নিয়মভঙ্গের প্রমাণ পেলে তার প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেওয়া হবে।’