মেঘলা পরিবহণের চালকের সনদ ছিল না, সমস্যা ছিল ব্রেকেও : র্যাব
রাজধানীর গুলিস্তানে হানিফ ফ্লাইওভারে চাপা দিয়ে দুজনের প্রাণ কেড়ে নেওয়া মেঘলা পরিবহণের বাসটির ব্রেকিং সিস্টেমে বেশ কিছু দিন ধরে সমস্যা ছিল। ফলে বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে বাসটি আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি চালক রাকিব শরীফ (২৫)। এ ছাড়া বাসের মতো ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিল না চালকের। এ দাবি করেছে র্যাব।
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, ‘বাসটির চালক রাকিব শরীফ হালকা মোটরযানের ড্রাইভিং লাইসেন্স (পেশাদার) দিয়ে বাসটি চালাচ্ছিলেন। রাকিব শরীফকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য জানিয়েছেন রাকিব।’
এর আগে গতকাল শনিবার সকালে হানিফ ফ্লাইওভারে মেঘলা পরিবহণের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কয়েকজন পথচারীকে ধাক্কা দেয়। এতে শেখ ফরিদ ও মো. বাদশা মিয়া নামে দুইজন নিহত হন। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। দুর্ঘটনার পর বাসটির চালক সেখান থেকে পালিয়ে যান। এই ঘটনায় নিহত শেখ ফরিদের পরিবারের পক্ষ থেকে ওয়ারী থানায় একটি মামলা করেন। পরে শনিবার রাতেই ওয়ারী থেকে গ্রেপ্তার করা হয় রাকিবকে।’
জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে কমান্ডার মঈন বলেন, ‘রাকিব ৭-৮ বছর আগে থেকে মেঘলা পরিবহণে একাধিক বাসে হেলপারি করতেন। পাশাপাশি ড্রাইভিংয়ের প্রশিক্ষণ নেন। হেলপারি ছেড়ে নিজেই বাস চালানোর জন্য মেঘলা পরিবহণের বিভিন্ন মালিকদের কাছে অনুরোধ করেন। কিন্তু, তার বৈধ লাইসেন্স না থাকায় মালিকরা তাকে গাড়ি চালানোর অনুমতি দেননি। পরবর্তীতে তদবিরের মাধ্যমে রাকিব মেঘলা পরিবহণের বিভিন্ন বাস চালানো শুরু করে। ২০১৯ সাল থেকে সে হালকা মোটরযান ড্রাইভিং লাইসেন্স (পেশাদার) দিয়ে ভারী মোটরযান চালানো শুরু করেন। কিন্তু, তার ভারী মোটরযান চালানোর মতো কোনো বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স (পেশাদার) ছিল না।’
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘দুর্ঘটনার ১৫ দিন আগে থেকে বাসটির মালিক সবুর মিয়ার কাছ থেকে দৈনিক দুই হাজার ২৫০ টাকা জমা দিয়ে বাসটি চালানো শুরু করেন রাকিব। ঘটনার দিন সকালে ভুলতা গাউছিয়া থেকে গুলিস্তানের উদ্দেশে তিনি বাসটি চালানো শুরু করেন। আনুমানিক সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যাত্রাবাড়ী হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে গুলিস্তান সংযোগে নামার সময় বাসের অধিক গতি থাকার কারণে এবং ব্রেক কাজ না করায় বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। পরবর্তীতে রাস্তার বাম পাশে আইল্যান্ডের সঙ্গে ঘেঁষে নামতে থাকে। এই সময় ফ্লাইওভারে অন্য একটি বাস থেকে যাত্রী নামছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে বাসটি ধাক্কা দেয়। এতে দুইজনের মৃত্যু হয় এবং কয়েকজন আহত হন।’
গ্রেপ্তার রাকিবের বরাত দিয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘বাসের দৈনিক চুক্তিভিত্তিক ভাড়া মালিককে পরিশোধ এবং অধিক মুনাফার লোভে তিনি ট্রিপ বাড়াতে প্রতিযোগিতামূলক বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। বেশি গতির কারণে ফ্লাইওভার দিয়ে নামার সময় গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে পথচারীদের চাপা দেয়।’