মৌলভীবাজারে আমনের বাম্পার ফলন, ধান কাটা শুরু
নতুন ধানের মৌ-মৌ গন্ধে যেন বিভোর মৌলভীবাজার জেলার চারিপাশ। কেউ ধান কাটছে। আবার কেউ প্রস্তুতি নিচ্ছে। চলতি আমন মৌসুমে আনুষ্ঠানিকভাবে আগাম জাতের ব্রি ধান কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে কর্তন শুরু হয়েছে। আমন ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। তবে ধানের ন্যায্যমূল্য ও শ্রমিক সংকট থাকায় হতাশায় রয়েছেন কৃষকরা।
তবে কৃষি বিভাগ বলছে, যান্ত্রিক নির্ভর হলে শ্রমিক সংকট থাকবে না। পাশাপাশি খরচ কমার পাশাপাশি উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আজমেরু ও ভুজবল এলাকায় জেলা প্রশাসন ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে আগাম জাতের ব্রি ধান-৮৭ কর্তন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান অতিথি মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান কম্বাই হারভেস্টার চালিয়ে ধান কর্তন করেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে শস্য কর্তনের উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারী, সদর উপজেলা কৃষি অফিসার সুব্রত কুমার দত্ত।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অর্ণব মালাকার, স্থানীয় কৃষক ও কম্বাইন হারভেস্টার মালিক সৈয়দ হুমায়েদ আলী শাহীন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিরোজ কান্তি রায়।
কৃষি বিভাগ জানায়, এ বছর জেলায় আমন চাষাবাদ হয়েছে এক লাখ এক হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার মেট্রিক টন চাল। ২০২১-২২ অর্থবছরের সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের উন্নয়ন সহায়তার (ভর্তুকি) মাধ্যমে জেলায় বরাদ্দ আসে ১৫টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার, তিনটি রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, ১৯টি রিপার, ১৫টি ধান মাড়াই যন্ত্র ও একটি ভুট্টা মাড়াই যন্ত্র। এছাড়াও জেলায় সব মিলিয়ে ৬০টি কম্বাইন হারভেস্টার চলতি আমন মৌসুমে ধান কর্তন করবে। ৩৫০০ কৃষককে বিনামূল্যে উন্নত জাতের বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় কৃষক সৈয়দ হুমায়েদ আলী শাহিন জানান, এ বছর ১৩০ বিগা (কেয়ার) জমিতে ব্রি ধান ৮৭, ৭৫ ও হাইব্রিড জাতের ধানীগোল্ড ধান চাষ করেছেন। নিয়মিত পরিচর্যা করায় ফলন ভালো হয়েছে। ধান কর্তন শুরু হয়েছে। আশা করছেন ২৫০০ থেকে ২৬০০ মণ ধান পাবেন। প্রতি বছর ধান কাটার মৌসুমে দেখা দেয় শ্রমিক সংকট। কখনও শ্রমিকের যোগান পেলেও অতিরিক্ত মজুরি দিয়ে আনতে হয় তাদের। জমির ধান উঠাতেও বিলম্ব হয়। এতে অনেক জমিতে ধান ঝরে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ কারণে কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে ধান কর্তন করছেন। চারা রোপনের জন্য রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিন নিয়েছেন।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারী জানান, খাদ্যে উদ্বৃত্ত মৌলভীবাজার জেলায় এ বছর সর্বকালের সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। নতুন নতুন ধানের জাত দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের মধ্যে। চলতি আমন মৌসুমে আগাম জাতের বিনা ধান-১৭, ব্রি-ধান ৭১,৭২,৭৫ ও ৮৭, ধান কর্তন চলছে। ইতোমধ্যে এক ভাগ ধান কর্তন হয়েছে। কর্তনকৃত জমিতে শরিষা, ভুট্টা ও সূর্যমুখী আবাদ হবে। এতে করে শস্যের নিবিরতা বৃদ্ধি পাবে ও জাতীয়ভাবে এর উৎপাদন যোগ হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘চলতি আমন মৌসুমে ৭০ ভাগ ভর্তুকির ১৫ টি কম্বাইন হারভেস্টার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কম সময়ে অল্প খরচে কম্বাইন হারভেস্টার দ্বারা ধান কর্তন, মাড়াই, ঝাড়াই করে মাঠ থেকে উঠানে আনা একবারে সহজ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে যান্ত্রিক নির্ভরশীল হলে শ্রমিক সংকট এক সময় থাকবে না। পাশাপাশি শস্যের উৎপাদন বাড়বে ও উৎপাদন খরচ কমে যাবে।’
কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়ে আমন ধান কর্তনের শুভ সূচনা শেষে জেলা প্রশাসক মীর নাহীদ আহসান জানান, বর্তমান সরকার কৃষি খাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যান্ত্রিকীকরণে ভর্তুকি দিচ্ছে। কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও কৃষি বিভাগের আন্তরিকতায় শস্যের উদ্বৃত্ত অঞ্চল হিসেবে পরিণত হয়েছে মৌলভীবাজার জেলা। যান্ত্রিকীকরণের কারণে আগাম শস্য কর্তন করা হয়েছে। জমি থেকে ধান তোলার পর এ জমিতে অন্য একটি ফসল উৎপাদন করা সম্ভব।
এসব বিষয়ে কৃষকদের উৎসাহ দিলে জেলায় কৃষি বিপ্লব ঘটবে বলে প্রত্যাশা করেন জেলা প্রশাসক।
ধানের ন্যায্য মূল্যসহ স্থানীয় কৃষকদের দাবি, সরকারি উদ্যোগে টেকসই, উন্নতমানের কৃষি যন্ত্র সরবরাহ ও খুচরা যন্ত্রাংশ কম মূল্যে পাওয়া। এত করে উৎসাহ বাড়ার পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।