মৌলভীবাজারে বিশাল মাছের মেলা, একেকটির দাম লক্ষাধিক
মৌলভীবাজার, সিলেট ও হবিগঞ্জের সীমানা ঘেঁষে জেলার শেরপুর এলাকায় কুশিয়ারা নদীর পাড়ে প্রতিবছর মাছের মেলা বসে। পৌষসংক্রান্তি উপলক্ষে মাছের মেলাটি শুরু হলে এটি এখন সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। গত সোমবার রাত থেকে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী এই মেলা শেষ হয় আজ বুধবার দুপুরে।
তীব্র শীতে কনকনে ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে মেলাজুড়ে ছিল ক্রেতা-বিক্রেতা আর কৌতূহলী মানুষের ঢল। প্রায় দুইশ বছর আগে থেকে চলে আসা মেলায় হাওর ও নদীতে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা দেশীয় প্রজাতির টাটকা মাছ কিনতে ক্রেতা ও পাইকাররা ভিড় জমান। মেলায় আগের মতো নেই জুয়া ও যাত্রার নামে অশ্লীলতা। গেল কয়েক বছর থেকে প্রশাসন স্থানীয়দের অনুরোধে তা বন্ধ করে দিয়েছে। মেলায় একসঙ্গে বিশাল আকারের বিপুল মাছ দেখে নতুন আসা অনেকেই আশ্চর্য হন। তাই মাছ কিনতে ও দেখতে উৎসুক মানুষের ভিড় ও বাড়তি কৌতূহল নিবারণে তারা পুরো মাছের মেলা ঘুরে দেখেন।
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/01/15/2.jpg)
মাছের মেলা ঘুরে দেখা যায়, একটি বিশাল আইড় মাছের দাম হাঁকা হয় এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা। বাঘাইড়ের দাম হাঁকা হয় এক লাখ ৩০ হাজার ও বোয়াল মাছের দাম হাঁকা হয় এক লাখ ১০ হাজার টাকা। একটি আইড় মাছ বিক্রি হয়েছে ৭৫ হাজার টাকায়।
মেলায় আসা ক্রেতা জসিম উদ্দিন জানান, হাওর ও নদীতে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা দেশীয় প্রজাতির ফরমালিনমুক্ত টাটকা মাছ কিনতে এসেছেন। মাছের মেলা উপলক্ষে অনেকেই নিজ এলাকায় আসেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। মেলা উপলক্ষে অনেক প্রবাসী দেশে আসেন। তা ছাড়া মেলাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দাদের আত্মীয়স্বজনও আসেন বাড়িতে নানা জাতের মাছের স্বাদ নিতে। একই মন্তব্য জানালেন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী মুহিবুর রহমান।
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/01/15/3.jpg)
মাছ ব্যবসায়ী আমীর আলী ও রমিজ উদ্দিন জানান, ঐতিহ্য ধরে রাখতে বছরজুড়ে নানা কষ্টে তাঁরা মাছ সংগ্রহে রাখেন। হাওর ও নদীতে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা মাছ সাধারণত নিয়ে আসেন এই মেলায়। তাঁরা জানালেন, মেলায় স্থানীয় হাওর ও নদীর অনেক বড় বড় জীবিত মাছ ও ফরমালিনমুক্ত মাছ নিয়ে আসেন। পরিপক্ব এ মাছগুলো খেতেও সুস্বাদু। তবে এ বছর মেলা উপলক্ষে মাছের সংগ্রহ বেশি থাকলেও ক্রেতার উপস্থিতি অনেকটা কম।
ব্যবসায়ীরা মেলায় পাশের কুশিয়ারা নদী, হাকালুকি হাওর, কাওয়াদিঘি হাওর, হাইল হাওর ও সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আইড়, বাঘাইড়, রুই, বোয়াল, কাতলা, গজারসহ বিশাল আকৃতির বিভিন্ন মাছ নিয়ে আসেন।
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/01/15/4.jpg)
মাছের মেলা অয়োজক কমিটির সভাপতি মো. আশরাফ আলী খান জানান, গত পাঁচ বছর জুয়াসহ যাত্রা ও পুতুলনাচের নামে অশ্লীলতা বন্ধ হয়েছে। শুধু মাছের মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ফিরে পেয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা রাজস্ব সরকারকে তারা দিলেও মেলার জন্য এখনো স্থায়ী কোনো স্থান গড়ে ওঠেনি। তিনি সরকারের দায়িত্বশীলদের কাছে ঐতিহ্যবাহী এ মাছের মেলা টিকিয়ে রাখতে স্থায়ীভাবে একটি স্থান নির্ধারণের দাবি জানান।
যদিও এটি মাছের মেলা নামে পরিচিত, তথাপি মাছ ছাড়াও ফার্নিচার, গৃহস্থালি সামগ্রী, খেলনা ইমিটেশন, কাপড়, জুতাসহ গ্রামীণ ঐতিহ্যের দোকান স্থান পায়। বর্তমানে এই মাছের মেলা জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মিলনমেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এ ছাড়া বাদ যায়নি মুড়ি, মুড়কি আর মণ্ডা, মিঠাইসহ নানা মুখরোচক খাবার-দাবারের আয়োজন।