যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনি প্রচারণার পছন্দ-অপছন্দের প্রতিফলন ঘটেনি : সিইসি
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ও পরিবেশ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আবারও যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের প্রসঙ্গ টানলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। আগে জানিয়েছিলেন, ভোট নিয়ে বাংলাদেশের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাদীক্ষা নেওয়ার কথা। এবার বললেন, সেই দেশের নির্বাচনি প্রচারণায় ভোটারদের পছন্দ-অপছন্দের প্রতিফলন পড়া না পড়া নিয়ে।
আজ রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নির্বাচন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সিইসি। সে সময় তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে হার-জিত কেবলমাত্র ভোটারদের পছন্দ-অপছন্দের বিষয়। চসিক নির্বাচনি প্রচারণায় তার প্রতিফলন হয়েছে। যেমনটি সদ্য অনুষ্ঠিত আমেরিকার নির্বাচনেও কিন্তু ঘটেনি। এটা আমার উপলব্ধি।’
গত বছরের ১২ নভেম্বর ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে উত্তরার আইইএস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট প্রদান ও কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সিইসি কে এম নূরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র চার-পাঁচ দিনেও ভোট গণনা শেষ করতে পারে না। আর আমরা ইভিএমে চার-পাঁচ মিনিটে ফল ঘোষণা করে দিতে পারি। যুক্তরাষ্ট্রের আমাদের থেকে শিক্ষাদীক্ষা নেওয়া উচিত।’
সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউরোপের প্রসঙ্গ টেনে সিইসি আরো বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের বিষয়ে আমি সব সময় বলি, এটা দেখতে হবে গ্লোবালি, কাজ করতে হবে লোকালি। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের সংস্কৃতি দেড়শ বছরেরও বেশি। তা ছাড়া আরেকটি বিষয় হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ থেকে ভালো সিদ্ধান্ত আমরা গ্রহণ করি।’
‘আমার একটা কথা, তাদেরও আমাদের থেকে শিক্ষাদীক্ষা নেওয়া উচিত। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র চার-পাঁচ দিনেও ভোট গণনা করতে পারে না। ইভিএমে আমরা চার-পাঁচ মিনিটে ভোট গণনা করে কেন্দ্রে ফল ঘোষণা দিয়ে দিই। এই জিনিস যুক্তরাষ্ট্রে নেই। তাদের গণতান্ত্রিক অভিজ্ঞতায় সেটা এখনো পারেনি। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, তাদের কেন্দ্রীয় কোনো নির্বাচন কমিশন নেই।’ যোগ করেছিলেন কে এম নূরুল হুদা।
সিইসির এমন বক্তব্যের পর গণমাধ্যম থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সব স্থানেই আলোচনার ঝড় বয়ে যায়।
আজ চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সিইসি বলেন, ‘(চসিক নির্বাচনে) ভোট হবে ইভিএমের মাধ্যমে। ইতিমধ্যে এখানে যারা আছেন, তারা অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। ইভিএম ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ইভিএমের ব্যবহার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আপনাদের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করি। এ দেশের নির্বাচনি সংস্কৃতির তাগিদেই ইভিএমকে প্রতিষ্ঠা করা খুবই জরুরি। নির্বাচন কমিশন সব নির্বাচনে ইভিএম নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।’
‘বিগত দিনে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচনে ৬০ থেকে ৮৫ ভাগ লোক তাদের ভোটাধিকার করেছেন জানিয়ে নূরুল হুদা বলেন, ‘আমরা আশা করছি, আগামী নির্বাচনে এই ধারা অব্যাহত থাকবে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন একটি ঐতিহ্যবাহী করপোরেশন। এটা বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। সব মিলিয়ে এই সিটির নির্বাচনকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করি। বাংলাদেশের সব জনগণ, সুশীল সমাজ ও দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। সুতরাং সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন উপহার দেওয়া আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য এবং কাম্য। এখনো পর্যন্ত নির্বাচনের যে পরিবেশ রয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট। এই পরিস্থিতি যেন বজায় থাকে। সেটার জন্য আপনাদের সবার সহযোগিতা দরকার।’
সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে যারা নিয়োজিত রয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছে রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেট, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সব বাহিনী। আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ, সব প্রার্থীর প্রতি সমান আচরণ করবেন। আপনাদের কাছে একজন প্রার্থীর পরিচয়ই শেষ পরিচয়। কে কোন দলের, মতের, ধর্মের, বর্ণের বা গোত্রের তা বিবেচ্য বিষয় হবে না। প্রত্যেককে তার নির্বাচন প্রচারণায় আইনি সহায়তা প্রদান করা আপনাদের কর্তব্য। প্রত্যেক প্রার্থী যেন নির্বাচনি আচরণ বিধিমালা মেনে চলেন, তাও নিশ্চিত করা আপনাদের দায়িত্ব।’
কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘পোলিং এজেন্ট একজন প্রার্থীর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি প্রার্থীর প্রতিনিধি। তার নিরাপত্তা প্রদান নির্বাচনি ব্যবস্থাপনায় জড়িত প্রত্যেক কর্মকর্তার দায়িত্ব। প্রার্থীগণের এজেন্ট নিয়ে অভিযোগ থাকে। কেন্দ্রে এজেন্ট না পাঠিয়েও বলা হয়, তাদেরকে বের করে দেওয়া হয়েছে অথবা তাদেরকে কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অভিযোগ যাই থাকুক না কেন, বিশেষভাবে আপনাদের যত্নবান হতে হবে। তাদের কথা শুনতে হবে এবং যতটুকু সম্ভব তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করতে হবে। এ রকম যেন অভিযোগ না থাকে, যাতে তাদের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে বা কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কোনো প্রার্থী বা এজেন্ট যদি আপনাদের সাহায্য চান, আপনাদের উচিত তাকে সহায়তা করা। এবং সেটা করবেন।’