রংপুরে পানিতে ভাসছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর
রংপুরের কাউনিয়ায় দুদিনের বৃষ্টিতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী পরিবারগুলো। ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে এবং তা নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় উপকারভোগীরা ঘর ছেড়ে অন্যের বাড়িঘর ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো নিচু জায়গায়, সেখানে মাটি ভরাট করে উঁচু না করে ঘর নির্মাণ করায় এ পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীরা বলছেন, উপহারের ঘরগুলো নিচু জায়গায় করা হয়েছে। এ কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। আশপাশে পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় হাঁটু পানিতে ডুবে যায় ঘর। অথচ এ প্রকল্পের কাজের সময় স্থানীয় লোকজন জায়গাটি উঁচু না করে ঘর নির্মাণ না করার অনুরোধ করেছিল। কিন্তু তা শোনা হয়নি।
বুধবার বিকেলে কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ পৌরসভার মায়াবাজার ক্যানেলটারী মহল্লায় ভূমিহীনদের নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের আবাসন এলাকায় গিয়ে বৃষ্টির পানিতে ঘরগুলো ভাসতে দেখা গেছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আশপাশের নিচু জায়গায়ও বৃষ্টির পানি আটকা পড়ে আছে।
খবর নিয়ে জানা গেছে, ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের জন্য গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মায়া গ্রুপের পরিচালনা পর্ষদ ৫৬ শতাংশ জমি সরকারকে দান করে। সেই জমিতে গৃহহীন ও ভূমিহীনরা ২২টি উপকারভোগীর প্রত্যেককে দুই শতাংশ জমি ও পাকাঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়। তবে সরকার ঘোষিত উপহারের এই ঘরগুলো নিচু জায়গায় নির্মাণ করাতে সামান্য বৃষ্টির পানিতে এখন সেখানকার বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্যানেলটারী মহল্লার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২২টি ঘরের মধ্যে সাতটি ঘরের ভেতর ও বাইরের দিকে প্রায় দুই-তিন ফুট পানি জমেছে। সেখানকার উপকারভোগীরা ঘর ছেড়ে আশপাশের উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। এ ছাড়া অন্য ঘরগুলোতেও পানি ঢুকে পড়ার অবস্থা হয়েছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা আনিছুর বলেন, ‘সরকারের কোনো দোষ নাই। এটা নিচা জাগা (নিচু জায়গা)। একনা বৃষ্টিতে হামার সবারে ঘরোত পানি ঢুকছে বাহে। অ্যালা রান্না করারও সুযোগ নাই। হাঁটাচলার রাস্তা, টিউবওয়েল, গোসলখানা পর্যন্ত পানিতে ডুবি আছে। কেমন করি পানি কমি যাইবে চেয়ারম্যান, মেম্বারোক কন। হামরা প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।’
শাবানা খাতুন নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘এই জায়গাটা যদি একটু উচু হতো তাহলে আজকে এই অবস্থা হয় না। পানি নিষ্কাশন না হলে আমাদের কষ্ট আরও বাড়বে। মেয়র, ইউএনও, ডিসি স্যার সবাই এসে দেখলে বুঝবে আমরা কী রকম অসুবিধায় আছি।’
হারাগাছ পৌরসভার কাউন্সিলর নুরফুল ইসলাম সরা বলেন, ‘পানি নিষ্কাশনের নালাগুলো অবৈধভাবে দখল হওয়ার কারণে আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীসহ পুরো ক্যানেলটারী মহল্লার মানুষকে জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকলে এতক্ষণে পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব হতো।’
কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা তারিন বলেন, ‘পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পৌরসভার মেয়র ও জনপ্রতিনিধিদের বারবার বলার পরও পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি তারা। এ ছাড়া ড্রেনগুলো ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি থাকায় এখন আশ্রয়ণ প্রকল্পের এলাকা থেকে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না।’
রংপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা একেএম কামরুল হাসান বলেন, ‘রংপুরে দুই-তিন দিন ধরে থেমে থেমে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বুধবার রংপুরে ৩৩ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার রাতে ১৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া সোম ও রোববার- এই দুদিনে ২২৬ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গত বছর রংপুর জেলায় এক হাজার ৮৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল। তবে এ বছর বর্ষা মৌসুমে তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি। চলতি বছরের ২৭ আগস্ট পর্যন্ত জেলায় এক হাজার ৬৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।’