রামেকের করোনা ইউনিটে আরও ১৩ জনের মৃত্যু
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ছয় জন করোনা পজিটিভ ছিলেন। ছয় জন মারা যান উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। অপর একজনের করোনা নেগেটিভ রেজাল্ট এসেছে। হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী এসব তথ্য জানিয়েছেন।
বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, আজ সোমবার সকাল ৬টা থেকে আগের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে করোনা ইউনিটে ১৩ জনের মৃত্যু হয়। তাঁদের মধ্যে রাজশাহীর তিন জন, চাঁপাইনবাবগেঞ্জর ছয় জন, নাটোরের তিন জন এবং নওগাঁর একজন। মৃত ১৩ জনের মধ্যে দুজন মারা গেছেন আইসিইউতে। এ ছাড়া ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে তিন জন, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে একজন, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে দুজন, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে দুজন, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে একজন এবং ১ নম্বর ওয়ার্ডে দুজন মারা গেছেন। মৃত ১৩ জনের মধ্যে পুরুষ চারজন ও নারী নয় জন। ৬১ বছরের ঊর্ধ্বে মারা গেছেন ছয় জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে দুজন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে দুজন এবং ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে তিন জন। আর করোনা পজিটিভ হয়ে যে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের দু’জনের বাড়ি রাজশাহী, তিনজনের চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবং একজনের নাটোরে। এছাড়া উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারী ছয়জনের মধ্যে তিনজনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোরের দু’জন ও নওগাঁর একজন। আর নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে করোনা ওয়ার্ডে যে একজনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁর বাড়ি রাজশাহী জেলায়।
হাসপাতাল পরিচালক জানান, ২৪ ঘণ্টায় করোনা ইউনিটে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ৬২ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৩৪ জন। বর্তমানে হাসপাতালের আইসিইউয়ের ২০টি ও কেবিনের ১৫টি বেডসহ ৯টি করোনা ওয়ার্ডে ৩০৯ বেডের বিপরীতে ভর্তি রোগী আছেন ৪০২ জন। এর মধ্যে আইসিইউ’র ২০টি বেডে ১৯ জন, কেবিনের ১৫টি বেডের বিপরীতে ১৯ জন, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে ১৬টি বেডের বিপরীতে ১৮ জন, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৮টি বেডে ৪৭ জন, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৩২টি বেডের বিপরীতে ৪০ জন, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে ৩২টি বেডের বিপরীতে ৫০ জন, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে ১০টি বেডের বিপরীতে সাতজন, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৩২টি বেডের বিপরীতে ৫৬ জন, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ৩২টি বেডের বিপরীতে ৪৭ জন, ১ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৬টি বেডের বিপরীতে ৫১ জন এবং ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৬টি বেডের বিপরীতে ৪৮ জন রোগী ভর্তি আছেন। যেসব ওয়ার্ডে বেডের চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি আছেন, সেসব রোগীকে ওই ওয়ার্ডের মেঝে ও বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে রোববার সন্ধ্যায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের দুটি পিসিআর ল্যাবে রাজশাহী, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫৫৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৪৫ জনের শরীরে নভেল করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রাজশাহীতে শনাক্তের হার ৪৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। চাঁপাইনবাবগঞ্জে শনাক্তের হার ৪৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। এ ছাড়া নাটোরের একজনের নমুনা পরীক্ষা করে তার দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে রাজশাহী মহানগর এলাকায় ১৪ দিনের সর্বাত্মক লকডাউনের আজ ১১তম দিন চলছে। লকডাউনে মহানগর এলাকায় ওষুধ ও কৃষিপণ্যের দোকান এবং জরুরি সেবার দোকান ছাড়া সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কথা থাকলেও নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ছাড়া অন্যান্য এলাকায় মানা হচ্ছে না এ নিয়ম। সব ধরনের দোকানই খোলা রয়েছে। কাঁচাবাজার নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খোলা থাকলেও সেখানে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। জরুরি সেবা, রোগী পরিবহণ এবং কাঁচামাল পরিবহণের সঙ্গে জড়িত যানবাহন ছাড়া মহানগর এলাকার সঙ্গে সারা দেশের সরাসরি বাস ও ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। তবে মহানগর এলাকার বাইরে বানেশ্বর থেকে ঢাকাসহ সারা দেশের বাস চলাচল করছে। সেখান থেকে ছোট ছোট যানবাহনে মানুষ মহানগর এলাকায় প্রবেশ করছে। ফলে লকডাউন কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। নানা অজুহাতে নগরীতে লোকজনের চলাচল বেড়েছে। রিকশা ও অটোরিকশার চলাচলও রয়েছে স্বাভাবিক।