রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে জাতিসংঘের স্পষ্ট রোডম্যাপ চায় বাংলাদেশ
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/06/17/roadmap.jpg)
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে জাতিসংঘের স্পষ্ট রোডম্যাপ চায় বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘মানবিক বিবেচনায় আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। তবে এই সংকটটির সমাধান নিহিত রয়েছে মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের ওপর, যা গত চার বছরে সম্ভব হয়নি। আমরা চাই প্রত্যাবর্তন বিষয়ে জাতিসংঘ স্পষ্ট একটি রোডম্যাপ তৈরি করুক।’
বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু লাউঞ্জে স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমার-বিষয়ক বিশেষ দূত ক্রিস্টিন এস বার্গনারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠককালে এ কথা বলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারে দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থানের নেতিবাচক দিক বিশেষ করে ওই এলাকায় বসবাসরত মূল জনগোষ্ঠীর ওপর এর বিরূপ প্রভাবের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সত্বর যদি প্রত্যাবাসন শুরু না হয়, তাহলে এটি কেবল এই এলাকারই সামগ্রিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটাবে না, বরং তা ওই অঞ্চল এবং এর বাইরেও অস্থিরতা তৈরি করবে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ভাসানচর প্রকল্পের কথা অবহিত করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখানে রোহিঙ্গাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। জাতিসংঘ যাতে ভাসানচরে মানবিক সহায়তা প্রদান করে সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির উন্নতি হলে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতকে ভাসানচর পরিদর্শনে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান ড. এ. কে. আবদুল মোমেন।
বিবৃতিতে বলা ঞয়, মিয়ানমারে যাতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের উপযোগী অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা হয় এবং অচিরেই যাতে প্রত্যাবাসন কাজ শুরু করা যায়, সেজন্য জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসহ মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এবং বাইরের সব অংশীজনদের সঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত যোগাযোগ ও আলোচনা অব্যাহত রেখেছে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এ ছাড়া ভাসানচর পরিদর্শন করতে বিশেষ দূত তাঁর আগ্রহের কথা জানান।
পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘের পিস অপারেশন বিভাগের প্রধান আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়েরে ল্যাক্রুয়ার সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। এ সময় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অব্যাহত সমর্থন ও অংশগ্রহণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। শান্তিরক্ষীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জাতিসংঘের পিস অপারেশন বিভাগকে ধন্যবাদ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ ছাড়া নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বাংলাদেশের অগ্রণী ভূমিকার উদাহরণ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তিরক্ষী বিশেষ করে নারী শান্তিরক্ষীগণের ত্যাগের কথা স্মরণ করেন এবং আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ল্যাক্রুয়াকে অনুরোধ জানান যেন পিস অপারেশন বিভাগ নারী শান্তিরক্ষীদের আরও উৎসাহিত করতে বিশেষ ডকুমেন্টারিসহ অন্যান্য প্রচার সামগ্রী প্রস্তুত করে।
এ ছাড়া জাতিসংঘ সদর দপ্তর ও মাঠ পর্যায়ের শান্তিরক্ষা সংশ্লিষ্ট উচ্চ পদগুলোতে আরও বেশি বাংলাদেশি সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য জেনারেল ল্যাক্রুয়াকে অনুরোধ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের তাৎপর্যপূর্ণ অংশগ্রহণ ও সাফল্যমণ্ডিত অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করেন ল্যাক্রুয়া। তিনি আশা প্রকাশ করেন, শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের সম্পর্ক আগামী দিনগুলোতে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের পেশাদারত্ব ও দায়িত্বশীলতার প্রশংসা করেন ল্যাক্রুয়া।
উভয় বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা অংশগ্রহণ করেন।