রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান বাংলাদেশের
জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও আঞ্চলিক দেশগুলোকে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে প্রত্যাবর্তনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি এবং রোহিঙ্গাদের ওপর সৃষ্ট নৃশংসতম অপরাধের দায়বদ্ধতা নিরুপণ করা এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি।’
জাতিসংঘ সদর দপ্তরে স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটির সাধারণ বিতর্কে বক্তব্য দানকালে এ কথা বলেন রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ায় বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে এবং তা ক্রমেই বেড়ে চলছে জানিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে, এমনকি ভ্যাকসিনের উপযোগী সব রোহিঙ্গাকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রদান করছে। কিন্তু, দীর্ঘমেয়াদী এ সমস্যার সমাধান নিহিত রয়েছে নিজভূমি মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের ওপর।’
এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও আঞ্চলিক দেশগুলোকে মিয়ানমার সংকটের সমাধানে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি।
রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বলেন, ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি শীর্ষক বার্ষিক রেজুলেশন নিয়ে এই কমিটিতে আমরা ওআইসি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কাজ করে যাব।’
সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার বিষয়গুলোও তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা। রোহিঙ্গা সংকট ছাড়াও তৃতীয় কমিটিতে বাংলাদেশ যে সব বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেবে, তা হলো—ভ্যাকসিন সমতা নিশ্চিতকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা রোধ, শিক্ষাসহ শিশুদের সব অধিকারের সুরক্ষা, অভিবাসী কর্মীগণের কল্যাণ ও অধিকারের সুরক্ষা এবং জাতীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ে মানবাধিকার সমুন্নত ও সুরক্ষিত রাখা।
নাজুক পরিস্থিতিতে নিপতিত মানুষের ওপর কোভিড-১৯ যে অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে তা তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা। তিনি এ সংকট কাটিয়ে উঠতে সামগ্রিক ও টেকসই পুনরুদ্ধারের ওপর জোর দেন এবং এ ক্ষেত্রে বৃহত্তর একতা, সহযোগিতা ও সমন্বয়ের আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমাদের সমাজ ব্যবস্থার ভেতরে ও বাইরে এর আগে বিদ্যমান অসমতা ও ব্যবধানকে এ কোভিড আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, কোভিড অতিমারি থেকে পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে গৃহীত কর্মসূচিতে যাতে কেউ বাদ না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে এই কমিটি ভূমিকা রাখবে।’
এর আগে রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রথম কমিটি এবং পঞ্চম কমিটির সাধারণ বিতর্কে বক্তব্য দেন।