‘র্যাব মানবাধিকার লুণ্ঠন করেনি, রক্ষা করে চলেছে’
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছেন, ‘র্যাব মানবাধিকার লুণ্ঠন করেনি বরং মানবাধিকার রক্ষা করে চলেছে।’
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে চোরচক্রের চারজনকে আটক সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আপনারা যেগুলো বলছেন আমরা এখন পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমের বরাতে শুনেছি। অফিসিয়ালি আমরা এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাইনি। যখন পাব, তখন অবশ্যই সেটার নিরীক্ষান্তে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব। সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে।’
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ‘আমি বলব, মানবাধিকার রক্ষায় র্যাবের নয় হাজার সদস্যের এলিট ফোর্স, এই ফোর্সের এখন পর্যন্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজাদসহ ২৮ জন সদস্য জীবন দিয়েছেন। মানবাধিকার রক্ষায় আমাদের এক হাজারের অধিক সদস্যের অঙ্গহানি হয়েছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা সমুন্নত রাখার জন্য আমাদের দুই হাজারের অধিক সদস্য আহত হয়েছে। আমার মনে হয়, বিশ্বে এমন কোনো ফোর্স নেই; যে ফোর্সের সদস্য সংখ্যা নয় হাজার, তাদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা ও মানবাধিকার রক্ষার্থে যে আত্মত্যাগ, পৃথিবীর আর কোনো বাহিনীর রয়েছে কিনা আমার সন্দেহ রয়েছে।’
র্যাব পরিচালক বলেন, ‘র্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে জঙ্গি, মাদক এ সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে। আজকে র্যাবের অভিযানিক সাফ্যলের কারণে জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদ, দক্ষিণ বা উত্তর উঞ্চলের সন্ত্রাসবাদ কিন্তু শূন্যের কোঠায় চলে এসেছে। আজকে বলব, র্যাবের এই কার্যক্রমের জন্য সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হয়েছে। আমরা দস্যুমুক্ত সুন্দরবনের তৃতীয় বর্ষপূর্তি পালন করেছি। দুনিয়াতে এমন নজির কমই রয়েছে, যেখানে সুন্দরবনের মতো এমন একটি বৃহৎ বন দস্যুমুক্ত হয়েছে। এখানে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে।’
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আপনারা এটাও তো দেখেছেন, সুন্দরবনের ৩৬টি দস্যু বাহিনীর ৩২৬ জন আত্মসমর্থন করেছেন। তাদের পুনর্বাসনে র্যাব যে মানবিকতা দেখিয়েছে, তাদের পুনর্বাসনে র্যাব ঘর ও গরু দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাদের পুনর্বাসনে যা যা করা দরকার র্যাব তা করেছে। আপনারা দেখেছেন, বাঁশখালীসহ বিভিন্ন জায়গায় জলদস্যু ছিল, তারাও আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদের পুনর্বাসনের জন্য যা করা দরকার, করা হয়েছে। আপনারা দেখেছেন; র্যাবের তৎপরতায় জঙ্গিরাও অনেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। আমরা তাদের পুনর্বাসনেও যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা বলতে চাই, বিশ্বে খুব কম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে যারা এভাবে মানবিকতা দেখিয়েছে। সুতরাং, আমরা বলব, আমরা মানবাধিকার লুণ্ঠন করিনি, মানবাধিকার রক্ষা করে চলেছি।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, র্যাবের যে নিয়মশৃঙ্খলা রয়েছে, তা অত্যন্ত কঠোরভাবে পালন করা হয়। এখানে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না। র্যাবই প্রথম বাহিনী, যাদের সদস্যদের প্রথম ডোপ টেস্টের মাধ্যমে দেখা হয়েছে এখানে কোনো মাদকাসক্ত রয়েছে কিনা। এখন সরকারি চাকরির ক্ষেত্রেই ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এখানে কেউ নিয়মবর্হিভূত কাজ করলে তাকে শাস্তি পেতে হয়। র্যাব মানুষের অধিকার আদায়ে সব সময় জীবন দিয়েছে, আগামীতেও দিবে।’
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সব তথ্য গণমাধ্যমের বরাতে আমরা জেনেছি। আমরা অবশ্যই অফিসিয়ালি চিঠি পাব, জানব। অফিসিয়িালি এই ডকুমেন্টগুলো প্রাপ্তি সাপক্ষে নিরীক্ষান্তে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, আমরা নিব। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষে গ্রহণ করেছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘বিভিন্ন সময় আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়ে থাকে, গোলাগুলি বা ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটে। আমরা মনে করি, একটি দেশের নাগরিক হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী আত্মরক্ষার অধিকার কিন্তু দেশের আইন তাকে দিয়েছে। আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন অভিযানে যেগুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। অভিযানে গিয়ে মাদক বিরোধ বা জঙ্গিবিরোধী অভিযানে এসব ঘটনা ঘটেছে। আমরা যখন প্রতিরোরোধের শিকার হয়েছি, আমাদের ওপর যখন সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়েছে, তখনই একমাত্র আমরা গুলি করেছি। গুলি বিনিময়ের ঘটনায় কিন্তু আমাদের এখনও পর্যন্ত ২৮ জন সদস্য জীবন দিয়েছেন।’