শিক্ষার আলো নেই রঘুনাথপুরে
নেই একটিও বিদ্যালয়। শত শত শিশু বঞ্চিত হচ্ছে তাদের মৌলিক অধিকার শিক্ষার আলো থেকে। ফলে, বাল্যবিয়ে আর শিশুশ্রমের শিকার হচ্ছে তারা। বখাটেপনায় জড়িয়ে সংসার ও সমাজে তৈরি করছে অশান্তি। এসব বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন তাদের অভিভাবকেরা।
অন্যদিকে, গ্রামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় বিভিন্ন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয় গ্রামের মসজিদে। এতে করে ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয় মুসল্লিদের মধ্যে।
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের একটি বর্ধিত গ্রামের নাম রঘুনাথপুর। স্থানীয়রা জানান, এখানে প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার লোকের বসবাস, যাদের বেশির ভাগই দরিদ্র শ্রমজীবী। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত এখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে ওঠেনি। বর্তমান সরকারের টানা শাসনামলে ২০১৪ ও ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রীর ‘বিদ্যালয় বিহীন গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপন’ প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে আড়াই হাজার নতুন বিদ্যালয় নির্মাণ করা হলেও এ গ্রাম থাকে বঞ্চিত।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গ্রামে বিদ্যালয় না থাকায় অধিকাংশ শিশুরাই সারা দিন খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকে। এতে করে ঝগড়া-ফ্যাসাদে জড়িয়ে পড়ছে তারা। ফলে, সমাজসহ পরিবারে অশান্তি তৈরি হচ্ছে। আর এসব থেকে সন্তানদের সরিয়ে রাখতে অল্প বয়সেই বিভিন্ন কাজে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অল্প বয়সে রোজগারে নামা ছেলে-মেয়েরা বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছে।
গ্রামে বিদ্যালয় না থাকায় শিশুরা পড়াশোনা করতে পারছে না। অন্যান্য শিশুদের মতো তারাও পড়তে চায় বলে জানায় শিশু খুশি, আয়াত, নাজমুল ও ইহান।
রঘুনাথপুর গ্রামের উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা জানান, শুধু একটি বিদ্যালয়ের অভাবে তাঁদের সন্তানেরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শিকার হচ্ছে বাল্যবিয়েসহ শিশুশ্রমের। পাশের শিবপুর গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও, সেটি অনেক দূরে। সেখানে যেতে হলে শিশুদের ভৈরব-কিশোরগঞ্জ রেললাইন এবং ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। তাই সন্তানদের পাঠানো নিরাপদবোধ করেন না অভিভাবকেরা। তাঁরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন, অবিলম্বে তাঁদের গ্রামে যেন একটি বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, একটি বিদ্যালয় না থাকায় নির্বাচনের সময় গ্রামের মসজিদটিকে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
শিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম জানান, রঘুনাথপুর গ্রামে স্থানীয়দের সহায়তায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে একজন ভূমি দান করবেন বলে কথা দিয়েছেন।’ ভূমি পাওয়ার পর স্কুলটি স্থাপনে সরকারের সহায়তা কামনা করেন ইউপি চেয়ারম্যান।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আলীম রানা জানান, রঘুনাথপুর গ্রামের আশপাশের গ্রামগুলোতে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এই গ্রামের অনেক শিশু সেসব স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করে। তবে তাদের নিজ গ্রামে একটি বিদ্যালয় হলে গ্রামের কোমলমতি শিশুদের শিক্ষার বিস্তার ঘটত। গ্রামের লোকজন ভূমির ব্যবস্থা করে দিতে পারলে বিদ্যালয়টি স্থাপনে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ বিদ্যালয় না থাকাকে দুঃখজনক উল্লেখ করে জানান, ৩৩ থেকে ৩৫ শতাংশ ভূমি পাওয়া গেলে সেখানে দ্রুত একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনে উদ্যোগ নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে তিনি স্থানীয় ভূমি মালিকদের দাতা হিসেবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।