সংসদ সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারছে না : রাশেদ খান মেনন
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ‘বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে ইনডেমনিটি আইন থাকতে পারে না। আমাদের সংসদ যে ভূমিকা পালন করার কথা, দুঃখজনক হলেও সত্য, সংসদ সঠিকভাবে সে ভূমিকা পালন করতে পারছে না।’
সিরডাপ মিলনায়তনে আজ শনিবার (২৯ এপ্রিল) ক্যাব আয়োজিত ‘জ্বালানি সংকট ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন’ শীর্ষক এক সেমিনারে রাশেদ খান মেনন এসব কথা বলেন। সেমিনারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহের সব পর্যায়ে স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করাসহ প্রস্তাবিত সংস্কার বাস্তবায়নে ক্যাবের ১৩ দফা দাবি জানিয়েছে ক্যাব।
ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাসদের সহসাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, সিপিডির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, শামসুল হুদা, দিলীপ বড়ুয়া, মনোয়ার মোস্তফা, ক্যাবের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অভিযোগ অনুসন্ধান এবং গবেষণা কমিশনের সদস্য এম এম আকাশ, বদরুল ইমাম, সুশান্ত কুমার দাশ, ইকবাল হাবিব, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া প্রমুখ।
সেমিনারে ক্যাবের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল আলম ১৩ দফা দবি উপস্থাপন করেন। লিখিত বক্তব্যে শামসুল আলম ক্যাবের পক্ষে যেসব দাবি উপস্থাপন করেন সেগুলো হলো—
১. বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত উন্নয়নে প্রতিযোগিতাবিহীন যেকোনো ধরনের বিনিয়োগ আইন দ্বারা নিষিদ্ধ হতে হবে।
২. সরকার ব্যক্তিখাতের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িত হবে না এবং সরকারি মালিকানাধীন কোনো কোম্পানির শেয়ার ব্যক্তি খাতে হস্তান্তর করবে না, আইন দ্বারা তা নিশ্চিত হতে হবে।
৩. বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানি খাতভুক্ত সরকারি ও যৌথ মালিকানাধীন সব কোম্পানির পরিচালনা বোর্ড থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উভয় বিভাগের সব আমলাদের প্রত্যাহার করতে হবে।
৪. নিজস্ব কারিগরি জনবল দ্বারা স্বাধীনভাবে উভয় খাতের কোম্পানি/সংস্থাসমূহের কার্যক্রম পরিচালিত হতে হবে। সেজন্য আপস্ট্রিম রেগুলেটর হিসেবে মন্ত্রণালয়কে শুধু বিধি ও নীতি প্রণয়ন এবং আইন, বিধি-প্রবিধান অনুসরণ ও রেগুলেটরি আদেশসমূহ বাস্তবায়নে প্রশাসনিক নজরদারি ও লাইসেন্সিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। ডাউনস্ট্রিম রেগুলেটর বিইআরসিকে সক্রিয়, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হতে হবে।
৫. মুনাফা ছাড়া কস্ট বেসিসে ৫০ শতাংশের অধিক বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদন সরকারী মালিকানায় হতে হবে। কস্ট প্লাস নয়, সরকার শুধু কস্ট বেসিসে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সেবা দেবে।
৬. গ্যাস উন্নয়ন তহবিল, বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিল, জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিলের অর্থ যথাক্রমে গ্যাস অনুসন্ধান, বিদ্যুৎ, উৎপাদন ও জ্বালানি আমদানিতে ব্যয় ভোক্তার ইকুইটি বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হতে হবে।
৭. প্রাথমিক জ্বালানি মিশ্রে স্বল্প ও মধ্য মেয়াদি পরিকল্পনায় কয়লা ও তেলের অনুপাত কমাতে হবে। নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধান ও মজুদ বৃদ্ধি এবং নবায়যোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্বারা জ্বালানি আমদানি নিয়ন্ত্রিত হতে হবে।
৮. জলবায়ু তহবিলসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য উৎস থেকে উক্ত ক্ষয়ক্ষতি বাবদ ঋণ নয়, ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি/আদায় নিশ্চিত হতে হবে এবং সে ক্ষতিপূরণ ক্ষতিগ্রস্তদের সক্ষমতা উন্নয়নে বিনিয়োগ আইন দ্বারা নিশ্চিত হতে হবে।
৯. বিদ্যুৎ, জীবাশ্ম ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন নীতি, আইন, বিধি-বিধান ও পরিকল্পনা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সম্পাদিত প্যারিস চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
১০. জ্বালানি নিরাপত্তা সুরক্ষার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানির মূল্যহার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে অ্যানার্জি প্রাইজ স্টাবিলাইজড ফান্ড গঠিত হতে হবে।
১১. ভোক্তার জ্বালানি অধিকার সংরক্ষণ ও জ্বালানি সুবিচারের পরিপন্থী হওয়ায় (ক) দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০ বাদ দিতে হবে এবং (খ) বাংলাদেশ রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইন ২০০৩ সংশোধনক্রমে সংযোজিত ধারা ৩৪ক রহিত হতে হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যহার নির্ধারণের একক এখতিয়ার বিইআরসিকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
১২. ইতোমধ্যে (ক) বাপেক্স ও সান্তোষের মধ্যে মগনামা-২ অনুসন্ধান কূপ খননে সম্পাদিত সম্পূরক চুক্তি, (খ) বিআরইসি ও সামিট পাওয়ার লি. এর মধ্যে সম্পাদিত বিদ্যুৎ ক্রয় সম্পূরক চুক্তি এবং বিপিডিবি ও সামিট পাওয়ার লিমিটেডের মধ্যে সম্পাদিত মেঘনাঘাট পাওয়ার প্লান্টের বিদ্যুৎ ক্রয় সম্পূরক চুক্তি বেআইনি ও জনস্বার্থবিরোধী। জ্বালানি সুবিচারের পরিপন্থী প্রতীয়মান হওয়ায় এসব চুক্তি বাতিল হতে হবে। অনুরূপ অভিযোগে অভিযুক্ত অনান্য চুক্তিসমূহও যাচাই বাছাইক্রমে বাতিল হতে হবে।
১৩. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উন্নয়নে সম্পাদিত সব চুক্তি বিধিবদ্ধ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পাদনের লক্ষ্যে প্রক্রিয়ায় অনুমোদিত মডেল চুক্তি মতে হতে হবে।