সংস্কারের দাবিতে চারঘাট-বাঘা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
রাজশাহীর চারঘাটে রাস্তা সংস্কারের দাবিতে চারঘাট-বাঘা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় গ্রামবাসীসহ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। আজ শনিবার সকাল ১১টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা বিক্ষোভ চলাকালে বন্ধ হয়ে যায় চারঘাট-বাঘা সড়কে যানবাহন চলাচল। এতে চরম যানজট ও যাত্রীদের ভোগান্তি সৃষ্টি হয়।
চারঘাট-বাঘা মহাসড়কের চারঘাট পৌরসভার সরদহ ট্রাফিক মোড়ে সড়কের মাঝ বরাবর বাঁশ দিয়ে অবরোধ করে রাখে এলাকাবাসী। তাদের কেউ কেউ কাদা-পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে রাস্তার দুই পাশে যানজন সৃষ্টি হয়।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া চারঘাট পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজমুল হাসান বলেন, সরদহ ট্রাফিক মোড় থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটারের এই সড়কটি রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে যাওয়ার প্রধান রাস্তা। এই সড়কের পাশেই রয়েছে সরদহ মহিলা কলেজ, মুক্তারপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও মুক্তারপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এই সড়ক বেহাল হওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরাও বিপাকে পড়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, চারঘাট উপজেলার মোক্তারপুর ট্রাফিক মোড় থেকে ইউসুফপুর টাঙ্গন হয়ে রাজশাহী শহরে যাওয়ার রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে খানা-খন্দকে ভরা। ভারী যানবাহন চলাচল ও দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় রাস্তাটি মানুষের চলাচলের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। বিশেষ করে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে চরম ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়। বিভিন্ন স্থানে রাস্তাটি ভেঙে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। ফলে ভাঙাচোরা রাস্তাটি দিয়ে চলতে গিয়ে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। এর পরও টনক নড়ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
স্থানীয়দের দাবি, রাস্তাটির এমন করুণ পরিস্থিতির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। এর পরও সমাধান না হওয়ায় রাস্তাটি সংস্কারের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে তারা বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে।
মোক্তারপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, বিদ্যালয়ে আসতে হলে ওই রাস্তাটি ছাড়া বিকল্প কোনো রাস্তা নেই। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি দিয়ে বালুবাহী ভারী যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে রাস্তাটির এমন করুণ পরিণতি। তা ছাড়া রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার করা হয়নি। ফলে একটু বৃষ্টি হলেই শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে পারে না। কাদামাটি মাড়িয়ে তাদের বিদ্যালয়ে আসতে হয়।
এলাকাবাসীর বিক্ষোভ চলাকালে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে যান চারঘাট পৌরসভার মেয়র একরামুল হক। তিনি এলাকবাসীর দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বলেন, সড়কটি সংস্কারের জন্য তিনি উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় বলেছেন। ১০ চাকার বালুবাহী ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তাটি দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যে রাস্তার সংস্কারকাজ শুরুর আশ্বাস দিয়ে তিনি অবরোধ তুলে নিতে বিক্ষোভকারীদের অনুরোধ জানান। এ সময় বিক্ষোভকারীরা করতালি দিয়ে মেয়রকে অভিনন্দন জানিয়ে দুপুর ১টার দিকে অবরোধ তুলে নেয়।
সড়কটির বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বলেন, দুই বছর আগে রাস্তাটির মুক্তারপুর বাজার থেকে মুক্তারপুর উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত সংস্কারের দরপত্র আহ্বান হয়েছিল। ছয় মাস আগে সড়কটি সংস্কার করা হয়েছিল। তারা তখন এই সড়কে এক সপ্তাহের জন্য বালুর ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করেছিল, কিন্তু কেউ তাদের কথা শোনেনি। ফলে রাস্তাটি আবার নষ্ট হয়ে যায়। তবে রাস্তাটি যাতে ভারী যানবাহন চলাচল করলেও কোনো ক্ষতি না হয়, সেজন্য উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে রাস্তাটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা সামিরা বলেন, উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় রাস্তাটির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আলোচনা হয়েছে।
তানোর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ ফকরুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে রাস্তাটির বিষয়ে সমন্বয় সভায় আলোচনা হয়েছে। রাস্তাটি টেকসই করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।