সিত্রাং রূপ নিয়েছে নিম্নচাপে, সাত জেলায় নিহত ১২
উপকূলে আঘাত হেনে ধীরে ধীরে শক্তি কমে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এখন রূপ নিয়েছে নিম্নচাপে। মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র উপকূল অতিক্রম করেছে। এতে দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোকে বিপৎসংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ে সাত জেলায় ১২জন নিহতের তথ্য পাওয়া গেছে।
গতকাল সোমবার দিনগত রাতে প্রকাশিত আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমানে স্থল নিম্নচাপ আকারে ঢাকা–কুমিল্লা–ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থান করছে। রাতেই ঘূর্ণিঝড়টি সিলেট হয়ে ভারতে প্রবেশ করবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল ছেড়ে এলেও এখনো উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্য রয়েছে। মোংলা, পায়রা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে সাত নম্বর বিপৎসংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আর কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে, এনটিভি অনলাইনের কুমিল্লা প্রতিনিধি মো. জালাল উদ্দিন জানিয়েছেন, জেলার নাঙ্গলকোটে গাছের নিচে চাপা পড়ে একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছে। হেসাখাল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এমরান হোসেন বাহার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা হলেন—হেসাখাল (খামার পাড়) গ্রামের নিজাম উদ্দিন (২৮), তাঁর স্ত্রী সাথী আক্তার (২৪) ও কন্যা লিজা (৪)।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাব মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। সড়কে গাছ পড়ে যোগাযোগ বন্ধের খবর পাওয়া মাত্রই গাছ সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি উপজেলায় ১০ টন করে চাল পাঠানো হচ্ছে।
আমাদের সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি শরীফুল ইসলাম ইন্না জানান, সেখানে যমুনায় নৌকাডুবিতে মা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আরও তিনজনকে উদ্ধার করেছে পুলিশ ও স্থানীয়রা। গতকাল সোমবার রাতে সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব মোহনপুর এলাকায় নির্মাণাধীন শিল্পপার্কের উত্তরপাশে এ নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন—পূর্ব মোহনপুর গ্রামের খোকন শেখের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা (৩০) ও তাদের শিশু সন্তান আরাফাত। বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসাদ্দেক হোসেন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আমাদের বরগুনা প্রতিনিধি সোহেল হাফিজ জানান, সেখানে ঘরের ওপর গাছ পড়ে এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন। সোমবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত নারীর নাম আমেনা খাতুন। তিনি বরগুনা সদর উপজেলার সোনাখালি গ্রামের বাসিন্দা। পরে বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
নড়াইল থেকে আমাদের প্রতিনিধি এ মুনীর চৌধুরী জানান, ঘুর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে লোহাগড়ায় গাছের ডাল পড়ে একজন গৃহপরিচারিকার মৃত্যু হয়েছে৷ নিহতের নাম মর্জিনা বেগম (৩২)। তিনি রাজুপুর গ্রামের আব্দুল গাফফারের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নাসিরউদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গোপালগঞ্জ থেকে এনটিভি অনলাইনের প্রতিনিধি মাহবুব হোসেন সারমাত জানান, টুঙ্গিপাড়ায় গাছ চাপায় দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন—পাঁচকাহনিয়া গ্রামের রেজাউল খার স্ত্রী সারমিন বেগম (২৫) ও বাঁশবাড়িয়ার চরপাড়া গ্রামের হান্নান তালুকদারের স্ত্রী রোমেছা বেগম (৫৮)।
টুঙ্গিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আবুল মনসুর তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা জানিয়েছেন, নিহতদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের বসতঘর ঠিক করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে এনটিভি অনলাইনের প্রতিনিধি শিহাব উদ্দিন বিপু জানান, জেলার কসবায় ঘরের ওপর গাছ পড়ে জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার গভীর রাতে উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ধ্বজনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ উল আলম তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ ছাড়া ভোলায় দুজনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।