সেই ‘রানীর’ মৃত্যু, মালিকের লুকোচুরি
রেকর্ড গড়ার অপেক্ষায় থাকা সাভারের সেই খর্বাকৃতি গরু ‘রানী’ মারা গেছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গরুটিকে সাভার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মৃত বলে ঘোষণা করেন।
সাভার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাজেদুল ইসলাম বিকেলে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বেশ কয়েক দিন ধরে অসুস্থ এই গরুটিকে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের চিকিৎসকরা। গরুটির পেটে গ্যাস জমে জমে পেট ভেতরে ফুটো হয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। বেলা পৌনে ১১টায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। দেড় ঘণ্টা ধরে বাঁচানোর চেষ্টা ও পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর সোয়া ১২টার দিকে রানী মারা যায়।’
গত কোরবানির ঈদে এ গরুটির দাম উঠেছিল প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। গরুটির মালিক সাভারের শিকড় এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. আবু সুফিয়ান। গরুটি নিয়ে দেশে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিদেশেও প্রচার চলে। একপর্যায়ে বিশ্বের সবচেয়ে খর্বাকৃতি গরুর স্বীকৃতি পেতে খামার মালিক গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে আবেদন করেন।
তবে ‘রানী’র মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর মালিক আবু সুফিয়ানকে এই প্রতিবেদক একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি তা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘রানী সুস্থ আছে। তার মৃত্যুর বিষয়টি গুজব।’
‘রানী’র মৃত্যুর বিষয়টি মালিকের অস্বীকার করার পিছনে ‘অন্য কারণ’ থাকতে পারে বলে মনে করেন সাভার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাজেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে লুকোচুরি করার কিছু নেই। সম্ভবত গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের নাম লেখানোর জন্যেই তারা রানীর মৃত্যুর বিষয়টি আড়াল করতে চাচ্ছেন।’
এরপর বিকেল ৫টার দিকে এই প্রতিবেদক আবারও যোগাযোগ করেন শিকড় এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. আবু সুফিয়ানের সঙ্গে। তখন তিনি এনটিভি অনলাইনকে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘কে বলেছে রানী মারা গেছে?’
তখন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দেওয়া হলে আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আসলে রানীর মতো আরেকটি গরু আমরা সুনামগঞ্জ থেকে সংগ্রহ করেছি। সেই গরুটিকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছিল। এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর সুস্থভাবে তাকে আবার খামারে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।’
আবু সুফিয়ান আরও বলেন, ‘রানিকে নিয়ে দেশের সব মিডিয়ায় সংবাদ প্রচারের পর বিশ্ব মিডিয়াতেও এসেছে। রানি বলতে গেলে সেলিব্রেটি হয়ে গেছে। গতকালকেও চিকিৎসক ভিজিট করেছেন। রানী সুস্থ আছে।’
খামার কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রায় ১১ মাস আগে নওগাঁর প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ‘রানী’কে আনা হয় সাভারের আশুলিয়ায় শিকড় এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে। ভুট্টি জাতের এই গরুটির দৈর্ঘ্য ২০ ইঞ্চি এবং ওজন ২৬ কেজি।
গিনেস বুকে খর্বাকৃতির গরু হিসেবে বর্তমানে যে গরুটি আছে, সেটির উচ্চতা ২৪ দশমিক সাত ইঞ্চি। ২০১৪ সালের ২১ জুন খর্বাকৃতির গরু হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া ভারতের কেরালা রাজ্যে মানিকিয়াম জাতের গরুটির ওজন ৪০ কেজি।
শিকড় এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. আবু সুফিয়ান গত জুলাই মাসে এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছিলেন, তিনি গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী সম ধরনের প্রমাণাদি দাখিল করেছেন। কর্তৃপক্ষ আবেদন গ্রহণ করে সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ বিষয়টি জানাবে বলে জানিয়েছে।
‘রানী’র জন্য একটি ‘ভালো সংবাদের’ অপেক্ষায় ছিলেন খামার কর্তৃপক্ষ। তার মধ্যেই আজ গরুটি মারা যায়।
‘রানী’র আকস্মিক মৃত্যুতে শোকে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে এলাকাবাসী। তারা গরুটিকে একনজর দেখার জন্য খামারের সামনে ভিড় জমায়। কিন্তু কাউকে খামারে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। উপরন্তু মালিকপক্ষ জানায়, রানী সুস্থ আছে।
‘রানী’র মৃত্যু নিয়ে খামার মালিকের এমন লুকোচুরিতে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা।