সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে ২৪ আগস্ট
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। মামলাটি পুনরায় মহানগর দায়রা আদালতে ফেরত পাঠানোর দাবি করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী।
আজ সোমবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জাকির হোসেন এই দিন নির্ধারণ করেন। এদিনে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ধার্য ছিল। সে অনুযায়ী সাক্ষ্য দিতে তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী আদালতে হাজির হন। তবে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা এদিন মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারের সময় শেষ হয়ে গেছে মর্মে একটি আবেদন করে। তাই মামলাটি দায়রা আদালতে ফেরত পাঠানোর প্রার্থনা করেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ এনটিভি অনলাইনকে বিষয়টি জানিয়ে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন ২০০২ এর ১০(৪) ধারা মোতাবেক দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এই মামলার বিচারের সময় শেষ। আইন অনুযায়ী মামলাটি আর ওই আদালতে চলতে পারে না। তাই আমরা মামলাটি দায়রা আদালতে ফেরত পাঠানোর আবেদন করি। আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ২৪ আগস্ট দিন রেখেছেন। যে কারণে আজ এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি।
এই মামলার আসামিরা হলেন- ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, সেলিম খান, দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও আশিষ কুমার রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, তারিক সাঈদ মামুন, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, আদনান সিদ্দিকী ও ফারুক আব্বাসী।
১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে নায়ক সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ঘটনার দিনই নিহত সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় আদনান সিদ্দিকীকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সহকারী কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী আসামি আদনান সিদ্দিকীসহ নয় জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
অভিযোগপত্রে আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, তারিক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, আশিষ কুমার রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, ফারুক আব্বাসী ও সানজিদুল ইসলাম ইমনকে আসামি করা হয়।
অভিযোগপত্রে যা আছে
তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে বলেন, “বনানী জামে মসজিদের পাশে আবেদীন টাওয়ার। সেই টাওয়ারের অষ্টম তলায় ‘সুপার ট্রাম্পস ক্লাব’। এই ক্লাবের মালিক বান্টি ইসলাম ও আশিষ কুমার রায় চৌধুরী। সেই ক্লাবে আসামাজিক কার্যকলাপ, নাচ গান, মদ্য পান ও মহিলা দ্বারা অশ্লীল নৃত্য হতো এবং সেখানে আপত্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হতো।”
তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সোহেল চৌধুরী ট্রাম্পস ক্লাবে এমন আপত্তিকর পরিবেশ বন্ধ করার জন্য মসজিদ কমিটির লোকজন নিয়ে যান। তিনি সেখানে ক্লাব বন্ধ করার চেষ্টায় ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালের ১৪ জুলাই সেই ক্লাবে নারী বান্ধবীকে নিয়ে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর গোলমাল হয়। সোহেল চৌধুরী আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে গালি দেয়। পরে সোহেল চৌধুরীর বন্ধু কালা নাসির আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে গুলি করতে গেলে তিনি বাথরুমে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন।’
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, ‘মেজর (অব.) হাফিজ তাদের অনুরোধ করে সোহেল চৌধুরীকে নামিয়ে দেন। পরে বিভিন্ন সময় বান্টি ইসলাম ও আশিষ কুমার রায় চৌধুরীর সঙ্গে ট্রাম্পস ক্লাবে সোহেল চৌধুরীর গোলমাল হয়। সোহেল চৌধুরীর কারণে ট্রাম্পস ক্লাবের কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়। তাঁরা তখন সোহেল চৌধুরীকে ভয়ভীতি দেখান। ঘটনার দিন সোহেল চৌধুরী বনানীর সেই ট্রাম্পস ক্লাবে যেতে চান। তখন তাঁকে প্রবেশের অনুমতি না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি আবার রাত ৩টায় ট্রাম্পস ক্লাবের সম্মুখে এলে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পরিকল্পিতভাবে আসামিরা পেশাদার খুনি দিয়ে গুলি করে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করে বলে প্রমাণ হয়েছে।’