স্ত্রীর মামলায় বিসিএসে উত্তীর্ণ স্বামী কারাগারে
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর বিসিএসে উত্তীর্ণ স্বামীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত। মামলায় অভিযুক্ত লিখন সাকসেনা ৪০তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত। তিনি কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার আগানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবীরের ছেলে।
লিখন সাকসেনাকে বুধবার রাতে লালবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ এমএ মোর্শেদের (পিপিএম) নেতৃত্বে ও ভৈরব থানা পুলিশের সহযোগিতায় নিজ বাড়ি আগানগর ইউনিয়নের ছাগাইয়া গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে তার ভাই হৃদয় সাকসেনা ও শুক্রবার অনন্ত সাকসেনাকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে লালবাগ থানা পুলিশ।
হৃদয় সাকসেনা মামলার ৪নং আসামি। আর অনন্ত সাকসেনা বাদীর বাসায় ভাঙচুরের ঘটনার অভিযোগে আটক হন। লিখন সাকসেনাকে বৃহস্পতিবার বিকেলে এবং হৃদয় সাকসেনাকে শুক্রবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মামলার বাদী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌসীর সাথে ২০২১ সালের ৪ জুন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী লিখন সাকসেনার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে স্ত্রীর পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন। যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে প্রায় সময়ই মারধর ও মানসিক নির্যাতন করতেন। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাড়ি থেকে দাবিকৃত যৌতুকের ১০ লাখ টাকার মধ্যে দুই লাখ টাকা তার স্বামীকে এনে দেন।
এ প্রসঙ্গে মামলার বাদী গৃহবধূ জান্নাতুল ফেরদৌসী জানান, বিয়ের পর থেকে স্বামী লিখন সাকসেনাসহ তার শ্বশুর হুমায়ূন কবীর, শাশুড়ি শিউলী শ্রাবণী তার ওপর নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছেন। শুধু সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য এতোদিন তিনি সেই অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করে আসছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি স্বামী লিখন সাকসেনা ৪০তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হলে তাকে তালাক দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করতে উদ্যোগী হলে তিনি আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।
লালবাগ থানার মামলা নং-৬, (তারিখ : ১৪/০৫/২০২২খ্রি. ধারা: ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী ২০০৩) এর ১১ (গ)/৩০)। মামলার ১নং আসামি স্বামী লিখন সাকসেনা, ২নং আসামি শ্বশুর আগানগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবীর, ৩নং আসামি শাশুড়ি শিউলী শ্রাবণী ও ৪ নং আসামি দেবর হৃদয় সাকসেনা। তবে মামলার পর থেকেই তার শ্বশুর-শাশুড়ি পলাতক রয়েছেন বলে জানান জান্নাতুল ফেরদৌসী।
মামলার বিষয়ে জানতে আগানগর ইউপির চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবীরের মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগ করা হলেও বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
লালবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এম এ মোর্শেদ মুঠোফোনে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা মামলার আসামি লিখন সাকসেনাকে বুধবার ভোররাতে ভৈরবের ছাগাইয়া গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকা থেকে আটক করা হয় মামলার ৪নং আসামি তার ভাই হৃদয় সাকসেনাকে। তার অপর ছোটভাই অনন্ত সাকসেনা বাদীর বাসায় ভাঙচুর করছে মর্মে অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে আটক করি।
তিনি আরও বলেন, লিখন সাকসেনা ও হৃদয় সাকসেনাকে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হলে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। আজ শুক্রবার মামলার অপর আসামি অনন্ত সাকসেনাকে আদালতে হাজির করা হলে তাকেও কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। মামলার ২নং আসামি ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর ও ৩ নং আসামি তার স্ত্রী শিউলী শ্রাবণীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ।