স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন আজ
আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের তৃতীয় সম্মেলন আজ শনিবার। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটশন মিলনায়তনে দ্বিতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেই হবে নেতা নির্বাচন।
সম্মেলনে পদ পেতে চলছে প্রার্থীদের শেষ মুহূর্তের দৌড়ঝাঁপ। নিজেদের ‘যোগ্য’ প্রমাণে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ছুটে চলেছেন নেতারা। দলের দুর্দিনে কার কী ভূমিকা ছিল সেসব তুলে ধরার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ।
প্রায় ৯ বছর পর আজ অনুষ্ঠিত হবে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন। আর এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে।
সম্মেলন শেষে কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে ও অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নেতা নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক লীগের কাউন্সিলররা আছে। নেতৃত্ব নির্বাচনে তাঁরা নাম প্রস্তাব ও সমর্থন করবেন। সব কিছু অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হবে। সর্বোপরি আমাদের নেত্রী (শেখ হাসিনা) আছেন, তিনি হলেন সকলের অভিভাবক। তিনি যেটা ভালো মনে করবেন আমরা সেইটাই ভালো মনে করব। সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে যারা থাকতে চায় এবং যাদের ক্লিন ইমেজ আছে, সৎ ও কর্মঠ, তাদের আনা হবে।’
সংগঠনের শীর্ষ পদ পেতে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতাদের বাসাবাড়ি ছাড়াও পদপ্রত্যাশীরা বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ধানমণ্ডিতে দলীয় সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এতদিন ভিড় করছেন। রাজধানীজুড়ে পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন টানিয়ে নিজেদের প্রার্থিতা জানান দিয়েছেন তাঁরা।
সর্বশেষ ২০১২ সালে মোল্লা মো. আবু কাওসারকে সভাপতি ও পঙ্কজ দেবনাথকে সাধারণ সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন হয়। সম্প্রতি ক্যাসিনোকাণ্ডে মোল্লা মো. আবু কাওছারকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ভিন্ন অভিযোগে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথকে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সংগঠনের সহ-সভাপতি নির্মল চন্দ্র গুহ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মেজবাউল হোসেনকে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই দুই নেতা কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে জোর আলোচনায় আছেন। এ ছাড়া শীর্ষ পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহ-সভাপতি মতিউর রহমান মতি, সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল, সাজ্জাদ শাকিব বাদশা ও শেখ সোহেল রানা টিপু, সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক নাফিউল করিম নাফাসহ একডজন নেতা।
সম্মেলন ও নেতৃত্ব প্রসঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক লীগের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ সাকীব বাদশা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সততা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সব সময় দলের জন্য কাজ করছি। দলের দুঃসময়ে যারা জীবন বাজি রেখে দলের জন্য কাজ করেছেন, রাজপথে থেকেছেন, আন্দোলন করেছেন, তাঁরাই যেন নেতৃত্বে আসে—এটাই আমাদের চাওয়া।’
স্বেচ্ছাসেবক লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা নেত্রীর ১/১১-এর পরীক্ষিত সৈনিক। নির্যাতন সহ্য করেছি। সততা, স্বচ্ছতা, কমিটমেন্ট ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে দলের জন্য সব সময় নিয়োজিত রেখেছি। নেতৃত্বে যেই আসুক, তাঁর যেন অবশ্যই সততা, স্বচ্ছতা ও নেত্রীর কাছে কমিটমেন্ট থাকে।’
সম্মেলন নিয়ে প্রত্যাশার কথা জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রানা টিপু বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক লীগে নেতৃত্ব পাওয়ার প্রধান মানদণ্ড হোক ক্লিন ইমেজ, ত্যাগী মনোভাব ও সাংগঠনিক দক্ষতা।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন হলেও কমিটি ঘোষণা হয়নি। গত ১২ নভেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী ফরিদুর রহমান খান ইরান ও মো. ইসহাক মিয়া পক্ষের নেতারা সামনের চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়ান। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। দক্ষিণে সভাপতি পদে আলোচনায় আছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি কামরুল হাসান রিপন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তারিক সাঈদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, সাবেক ছাত্রনেতা ও কাউন্সিলর আনিসুর রহমান, শেখ মো. আনিসুজ্জামান রানা, ছাত্রলীগ দক্ষিণের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদসহ ডজনখানেক নেতা।
ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরান, বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল, সহ-সভাপতি গোলাম রাব্বানী, মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. ইসহাক মিয়া।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘সৎ, সাহসী, কোনো ধরনের বিতর্ক নেই, তারাই আসবে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্বে তারাই আসবে, যারা এক সময়ে ছাত্রলীগ করেছে, ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন, তাদের মাঝ থেকে যেন নেতৃত্ব হারিয়ে না যায়, যাদের যোগ্যতা আছে, দুঃসময়ে সংগঠন করেছে, ছাত্রলীগের সঙ্গে থেকে নেত্রীর সব কর্মসূচি পালনে ভূমিকা রেখেছে নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে তারা অবশ্যই অগ্রাধিকার পাবে।’
আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নির্মল চন্দ্র গুহ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে একাধিক প্রস্তুতি সভা করেছি। ১৩টি উপকমিটি করেছি। তাদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। সারা দেশে আমাদের সাংগঠনিক ৭৯টি জেলা থেকে ২৫ জন করে কাউন্সিলে উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া কাউন্সিলর ও ডেলিগেট মিলে প্রায় ১০ হাজার লোকের সমাগম হবে।’

নিজস্ব প্রতিবেদক