‘সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরে আটঘাট বেঁধে নামব’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সড়ক ও পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নতুন সড়ক আইন যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। নতুন এই আইন প্রয়োগের জন্য আমরা আরো সাত দিন সময় দিচ্ছি। কারণ আইনটি কার্যকর করতে আমরা আটঘাট বেঁধে নামব।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় কথা বলেন।
মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি থেকে তাদের কোন নেতা পদত্যাগ করল আর কে যোগ দিল তা নিয়ে আমাদের কোনো উৎসাহ নেই। এটা বিএনপির নিজস্ব বিষয়। এ নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। আমাদের দল নিয়েই আমরা এখন ব্যস্ত। আমাদের দলে কারা অনুপ্রবেশকারী আছে তাদের নিয়ে আমরা এখন কাজ করছি।
সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আইনটি আমরা পুরোপুরি কার্যকর করে রাজধানীর ফুটপাত, পার্কিং ও সড়কে শৃঙ্খলা আনব। এ জন্য সবার মধ্যেই আইনটি নিয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। আইনটি আমরা কঠোরভাবে প্রয়োগ করব।
গত ১ নভেম্বর সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হয়। তবে এটি প্রয়োগের জন্য প্রথমে এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়। পরে আজ আরো এক সপ্তাহ বাড়িয়ে আইন নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়।
নতুন এ আইনে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন অপরাধের দায়ে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড এবং চালকের লাইসেন্সের পয়েন্ট কাটার বিধানও রয়েছে এ আইনে।
এ ছাড়াও এ আইনে মোটরযানের ফিটনেস সনদ ছাড়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ ফিটনেস সনদ ব্যবহার বা ফিটনেসের অনুপযোগী, ঝুঁকিপূর্ণ মোটরযান রাস্তায় নামান তাহলে তিনি সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। রুট পারমিট ছাড়া পাবলিক প্লেসে পরিবহন যান ব্যবহার করলে তিনি সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
কেউ গণপরিবহনে ভাড়ার চার্ট প্রদর্শন ও নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া দাবি বা আদায় করলে তিনি সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং চালকের ক্ষেত্রে ১ পয়েন্ট কাটা হবে। সিএনজি বা ভাড়ায় চালিত এ ধরনের পরিবহনে মিটারের কারসাজি করলে তিনি সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং চালকের ১ পয়েন্ট কাটা হবে।
কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত কোনো মোটরযানের কারিগরি নির্দেশ অমান্য করলে পরিবহন মালিক সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড তবে কমপক্ষে এক বছর কিংবা সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। অতিরিক্ত ওজন বহন করে মোটরযান চালানোর অপরাধে এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং চালকের ২ পয়েন্ট কাটা হবে।
কেউ মোটরযানের গতিসীমা অতিক্রম করলে তিনি সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসেবে দোষসূচক ১ পয়েন্ট কাটা হবে।
নতুন এ আইনে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির দায়ে দায়ী চালকের সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষের মৃত্যু হয়েছে তদন্তে প্রমাণিত হলে ফৌজদারি আইনের ৩০২ ধারায় মামলা স্থানান্তর হবে। এতে চালকের মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে।

নিজস্ব প্রতিবেদক