১০ বছর ধরে ভুয়া এনআইডি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতেন তারা
গত ৮ থেকে ১০ বছর ধরে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জাল সার্টিফিকেট ও অন্যান্য জাল নথিপত্র তৈরি চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গতকাল সোমবার রাজধানীর মালিবাগ, বাসাবো, শাহজাহানপুর ও কোতোয়ালি থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণ্যমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রতারণাচক্রের গ্রেপ্তারকৃত মূলহোতা মো. গোলাম মোস্তফা (৬০), মো. জালাল বাশার (৫৪), মো. মুসলিম উদ্দিন (৬৫), মো. মিনারুল ইসলাম (মিন্নি) (২২) ও মো. তারেক মৃধা (২১)।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ চক্রের সদস্যরা নির্বাচন অফিস ও বিআরটিএ অফিসের সামনে অবস্থান করে গ্রাহকদের টার্গেট করতেন। পরবর্তীতে তাদেরকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার নিশ্চয়তা দিতেন। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে তারা হুবহু জাল প্রাপ্তি স্বীকারপত্র ও মানি রিসিটটি বিআরটিএ ও বিভিন্ন ব্যাংকসহ ভুয়া সিল ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে টাকার বিনিময়ে গ্রাহককে প্রদান করতেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘চক্রটি গত ১০ বছর ধরে বিপুল পরিমাণ ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অভিযানে উদ্ধার করা হয় দুটি কম্পিউটার, ২ হাজার ৪৬০টি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের জাল প্রাপ্তি স্বীকার রশিদ, ২৬টি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, ১টি ল্যাপটপ, ১টি ডিজিটাল ক্যামেরা, ১৮টি ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স, ৮০টি সাদা রঙের প্লাস্টিকের ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরির ব্লাঙ্ক কার্ড, ৫০টি স্বচ্ছ কার্ড হোল্ডার, দুটি রিল সিকিউরিটি লেমিনেটিং পেপার যা দিয়ে জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ও জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করা যায়, ১টি কার্ড প্রিন্টার, ৪টি সফ্টওয়্যারের সিডি, ৪টি পেনড্রাইভ, ৫টি মোবাইল ফোন ও নগদ ২ হাজার ৮০০ টাকা।
খন্দকার আল মঈন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু রোহিঙ্গা এক শ্রেণির অসাধুচক্রের মাধ্যমে ভুয়া এনআইডি কার্ড পায়। এ ছাড়া কয়েকজন জঙ্গি সদস্য আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে ভুয়া এনআইডি কার্ডের মাধ্যমে পাসপোর্ট তৈরি করে বিভিন্ন দেশে গমন করত নানা অপকর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সেই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে আমরা বেশকিছু দীর্ঘদিনের পলাতক আসামি গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। সেখানে আমরা দেখেছি তারা নিজেদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য ভিন্ন নামে ভুয়া এনআইডি কার্ড তৈরি করে নিজের প্রকৃত পরিচয় আড়াল করে অন্যত্র বসবাস করছে। আপনারা দেখেছেন সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে বেশ কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমরা ঘাতক পরিবহণের চালকদের গ্রেপ্তারে দেখেছি তাদের অনেকেই অপরিপক্ক চালক এবং তারা ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করে পরিবহণ চালাচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তারকৃতরা ৫-৭ জনের একটি চক্র। তারা গত ৮ থেকে ১০ বছর ধরে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জাল সার্টিফিকেট ও অন্যান্য জাল নথিপত্র তৈরি করে আসছে। গ্রেপ্তার হওয়া মোস্তফা এই চক্রের মূলহোতা, বাকিরা তার সহযোগী। চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন নির্বাচন অফিস ও বিআরটিএ অফিসের সামনে অবস্থান করে গ্রাহকদের টার্গেট করত। পরবর্তীতে তাদেরকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দিয়ে প্রতারণা করত। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে তারা হুবহু জাল প্রাপ্তি স্বীকারপত্র ও মানি রিসিটটি বিআরটিএ ও বিভিন্ন ব্যাংকসহ ভুয়া সিল ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে গ্রাহককে প্রদান করতেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, একইভাবে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপে চটকদার বিজ্ঞাপন পোস্ট করতেন। পরবর্তীতে কোনো গ্রাহক তাদের সঙ্গে এনআইডি/ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য যোগাযোগ করলে তারা তাদের মধ্যে কেউ গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুততম সময়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স/এনআইডি প্রাপ্তির অফার দিতেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করার ক্ষেত্রে তার ফেক আইডি ব্যবহার করত। তারা প্রতিটি ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা দাবি করতেন। এ ছাড়া দ্রুত এনআইডি/ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের জন্য ক্ষেত্র বিশেষে তারা ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা দাবি করতেন। এক্ষেত্রে তারা মোটরসাইকেল রাইডার, লাইসেন্সবিহীন বিভিন্ন গাড়িচালক যারা দ্রুত সময়ের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স/এনআইডি পেতে আগ্রহী অথবা যারা অবৈধভাবে লাইসেন্স/এনআইডি প্রত্যাশী তাদের টার্গেট করতেন।
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য তারা সাধারণত বিভিন্ন বিআরটিএ অফিস, নির্বাচন কমিশন অফিস বা সংশ্লিষ্ট অফিসের আশেপাশে দেখা করত। পরবর্তীতে তারা ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স/এনআইডি সরবরাহ করত। জরুরি ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে তারা একদিনের মধ্যেই সরবরাহ করত। তারা মোবাইল ব্যাংকিং বা সরাসরি অর্থ লেনদেন করত।