ভারত-মিয়ানমার বাণিজ্য ঘিরে পাহাড়ে ৫ স্থলবন্দর

প্রতিবেশী ভারতের পূর্বাঞ্চলের ‘সেভেন সিস্টার্স’ খ্যাত রাজ্যগুলো এবং মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্যকে আরো গতিশীল ও বেগবাম করতে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার সীমান্তে পাঁচটি স্থলবন্দর গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
এর মধ্যে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম, থানচি ও আলীকদমে, রাঙামাটি জেলার বরকলের তেগামুখে, খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলায় এই পাঁচটি স্থলবন্দর নির্মাণের প্রস্তাবনা রয়েছে।
আজ রোববার সকালে সচিবালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থলবন্দর স্থাপন সম্পর্কিত এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান নৌপরিবহনমন্ত্রী মো. শাজাহান খান। এর মধ্যে চারটি স্থলবন্দর এলাকা ভারত সীমান্তে এবং একটি মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থিত।
অবশ্য রাঙামাটি জেলার বরকলের তেগামুখে এবং খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলায় স্থলবন্দর নির্মাণের ব্যাপারে সরকার ২০১০ সালের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ঠেকামুখ ভারতের মিজোরাম সীমান্তে এবং রামগড় ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তে অবস্থিত। কিন্তু এ ব্যাপারে বিশেষ কোনো অগ্রগতি হয়নি।
এর মধ্যেই আজ সাংবাদিকদের কাছে পার্বত্য অঞ্চলে প্রস্তাবিত পাঁচটি স্থলবন্দরের বর্ণনা দেন নৌপরিবহনমন্ত্রী। তিনি জানান, এগুলোর মধ্যে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম স্থলবন্দর হবে মিয়ানমারের সঙ্গে। ঘুমধুমের সঙ্গে মিয়ানমারের তুমব্রো স্থলবন্দর সংযুক্ত হবে।
এই স্থলবন্দরটি চালু হলে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে মাছ, কাঠ, আচার, বড়ই, তেঁতুল, হলুদ, আদা, স্যান্ডেল, সানাকা মাটি, মশলা, বাঁশ, গাছের ছাল, সুপারি ইত্যাদি দ্রব্য আমদানি করা যাবে।
আর বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হবে সিমেন্ট, মানুষের মাথার চুল, প্লাস্টিক পানির ট্যাংক, আলু, অ্যালুমিনিয়াম সামগ্রী, তৈরি পোশাক, ডিম, টিউবয়েল ইত্যাদি।
নৌমন্ত্রী আরো জানান, ঘুমধুমের পাশ দিয়ে কক্সবাজার-টেকনাফ হাইওয়ে রয়েছে। আর ওই সীমান্তে বেগিন্না নামে নাফ নদের একটি শাখা রয়েছে। ফলে ওই বন্দর থেকে জল ও স্থলপথে পণ্য পরিবহন করা যাবে। এই স্থলবন্দর নির্মাণ উপলক্ষে ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার-টেকনাফ হাইওয়ে রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ চলছে।
খাগড়াছড়ির রামগড় স্থলবন্দরের বিষয়ে মন্ত্রী জানান, রামগড়ের সঙ্গে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক ভালো। এই স্থলবন্দরের ওপাশে হলো ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার সাব্রুম স্থলবন্দর।
রামগড় স্থলবন্দর চালু হলে ভারত থেকে কাঠ, বাঁশ, মসলা ও অন্যান্য দ্রব্য বাংলাদেশে আসবে। আর রপ্তানি হবে প্রসাধন সামগ্রী, সিরামিক, মেলামাইন পণ্য সামগ্রী, নির্মাণ সামগ্রী প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, তামাকজাত পণ্য, শুঁটকি মাছ প্রভৃতি।
আর রাঙামাটির বরকল উপজেলায় নির্মিতব্য ঠেগামুখ স্থলবন্দরের ওপাড়ে ভারতের মিজোরাম রাজ্যের দেমাগ্রি স্থলবন্দর অবস্থিত। ওই স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে শাড়ি-কাপড়, ওষুধ, গরম মসলা, কাঠ, চুনাপাথর, বাঁশ আমদানি করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।
আর এ স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে সিরামিক, মেলামাইন, প্লাস্টিক সামগ্রী, তামাকজাত পণ্য, চিপস, তৈরি পোশাক, পুরাতন কাপড়, পানির ফিল্টার, শুঁটকি মাছ প্রভৃতি রপ্তানি হবে।
আলীকদম ও থানচি স্থলবন্দরের তথ্য উপাত্ত নিয়ে পরবর্তী সমাবেশে জানাবেন বলে জানান নৌপরিবহনমন্ত্রী মো. শাজাহান খান।
মন্ত্রী আরো জানান, স্থলবন্দরগুলোর উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেকটিভিটি প্রজেক্ট’-এর আওতায় রামগড়সহ ভোমরা এবং বেনাপোল স্থলবন্দরের নিরাপত্তা ও উন্নয়নের কাজ চলছে।