ছবি বিকৃতির অভিযোগ উঠতেই এলাকায় উত্তেজনা, যুবক গ্রেপ্তার
জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তোলার পরপরই পান-সিগারেটের দোকানি এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অবমাননাকর ছবি আপলোড করার অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ওই যুবকের নাম সুজন কুমার মোহন্ত (৩৪)। তিনি পাঁচবিবি পৌর শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাদেরপাড়া মহল্লার তারাপদ মোহন্তর ছেলে। তারাপদ ও তাঁর ছেলে পান-সিগারেটের দোকানি।
গতকাল বুধবার রাতে সুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার পাঁচবিবি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কিরণ কুমার জানান, সকালে পুলিশ বাদী হয়ে সুজনের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা করেছে। তাঁকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, সুজনের নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ইসলাম ধর্মের একটি পবিত্র স্থাপনার ছবির সঙ্গে অন্য ছবি যুক্ত করে আপলোড করা হয়। এই ছবি দেখে কিছু যুবক মিছিল করে। পরে এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরিদর্শক আরো জানান, সুজনের পরিবারের নিরাপত্তায় বাড়িতে পুলিশ পাহারা বসানো হয়েছে। পাশাপাশি এলাকায় বিভিন্ন ধর্মীয় স্থাপনায়ও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।
তবে গ্রেপ্তার সুজনের বাবা তারাপদ মোহন্ত দাবি করেন, তাঁর ছেলে এ ধরনের কাজ করতে পারে না। সুজন তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। সে ফেসবুক চালাতে পারে কি না তাও জানে না পরিবার। সুজনের নাম করে অন্য কেউ শত্রুতাবশত এই কাজ করে থাকতে পারে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায়ও রসরাজ নামের নিরক্ষর মৎস্যজীবী হিন্দু যুবক ফেসবুকে ‘ধর্ম অবমাননার ছবি’ পোস্ট করেছে অভিযোগ করে ওই এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও বাড়িঘরে ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। পরে রসরাজকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে গ্রেপ্তারও করে। পরে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, স্থানীয় রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে এই ঘটনা ঘটে। বর্তমানে রসরাজ জামিনে রয়েছেন।
এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই জয়পুরহাটের পাঁচবিবির সুজনকে গ্রেপ্তার করা হলো।
গতকাল বুধবার এ ঘটনায় ওই এলাকায় তোলপাড় শুরু হলে তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচবিবি উপজেলার চেয়ারম্যান মোস্তফিজুর রহমান, জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার (এসপি) রশিদুল হাসান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূর উদ্দিন আল-ফারুক, পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান হাবিব, প্রেসক্লাব সভাপতি অধ্যাপক আজাদ আলীসহ এলাকার সুধীজনরা মতবিনিময় করেন।
পরে রাতেই পৌর এলাকার কাদেরপাড়া মহল্লায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ সুজন কুমার মোহন্তকে নিজ বাড়ি থেকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। রাতে কিছু যুবক মিছিলও করে বলে জানা গেছে।