মৃত্যুর অনুমতি প্রার্থনা, চিকিৎসা দিতে চায় ভারত-চীন

সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুর অনুমতি চেয়ে মেহেরপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা তোফাজ্জেল হোসেনের পরিবারকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ভারতের একটি হাসপাতাল।
তোফাজ্জেলের ওই পরিবারের দুই সন্তান ও এক নাতি দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত। দেশে-বিদেশে তাদের চিকিৎসা করিয়ে বাঁচানোর কোনো পথ না পেয়ে তিনি গত ১৯ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকের কাছে মৃত্যুর অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিলেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর বের হয়।
বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছে, ভারতের মুম্বাই শহরে অবস্থিত নিউরোজেন ব্রেইন অ্যান্ড স্পাইন ইনস্টিটিউট ওই পরিবারকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে। চীনের একটি চিকিৎসকদলও ওই পরিবারের চিকিৎসা করতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। তবে এ সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
জেলা প্রশাসকের কাছে মৃত্যুর অনুমতি চেয়ে ওই আবেদন সম্পর্কে সম্প্রতি ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ানে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিক হয়। ওই প্রতিবেদন দেখেই ভারতের নিউরোজেন ব্রেইন অ্যান্ড স্পাইন ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
নূর খান জানান, তারা আমাকে ফোন করে এবং তোফাজ্জেলের সঙ্গে যোগাযোগ করার বিষয়ে সাহায্য চায়। পরে ইমেইলে তাদের কাছে ওই পরিবারের রোগাক্রান্ত সদস্যদের প্রেসক্রিপশনসহ চিকিৎসার কাগজপত্র পাঠানো হয়। ভারতের ওই চিকিৎসাকেন্দ্র তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ও রোগীদের যাতায়াতের খরচ বহন করার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে।
জেলা শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়পাড়া গ্রামের ফল ব্যবসায়ী তোফাজ্জেলের দুই ছেলে সবুর, রায়হানুল ও মেয়ের ছেলে (নাতি) সৌরভ ডুশেন মাসকুলার ডিসট্রোফি (ডিএমডি-Duchenne Muscular Dystrophy) রোগে আক্রান্ত। এই রোগের ওষুধ আজও আবিষ্কার হয়নি বলে অনেকে দাবি করেছেন। শিশুদের চিকিৎসা করতে গিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দিয়েছেন তোফাজ্জেল।
দিন যতই যাচ্ছে, ততই মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে বড় সন্তানটি। একমাত্র মেয়ের সন্তানটির শরীরেও একই রোগ বাসা বেঁধেছে। তোফাজ্জেলের স্ত্রীও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। এ অবস্থায় তোফাজ্জেল চোখে অন্ধকার দেখছেন। চিকিৎসার ব্যয়ভার মেটাতে জেলা প্রশাসকের কাছে তোফাজ্জেল আবেদন করেন, ‘হয় আমার সন্তানের চিকিৎসাভার নেওয়া হোক অথবা মৃত্যুর অনুমতি দেওয়া হোক।’
আবেদনপত্র পেয়ে রোগাক্রান্ত পরিবারের কাছে গিয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক খায়রুল হাসান। দেশের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকদের একটি দল বর্তমানে তাঁদের চিকিৎসায় সহযোগিতা করছেন।