হবিগঞ্জের হাওরে বোরো ধানে পচন

হবিগঞ্জে টানা চারদিনের বৃষ্টিপাতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বড় বড় হাওরের ফসল নষ্ট হতে শুরু করেছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে ওই অঞ্চলে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে।
কৃষি বিভাগের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে হবিগঞ্জের ৪৩ হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে।
তবে স্থানীয় সূত্রের দাবি, প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। কৃষকরা তলিয়ে যাওয়া জমিগুলোর পাকা ও আধা পাকা ধান কেটে এনেছিলেন। কিন্তু টানা বৃষ্টির জন্য সেগুলো খলার (ফসল শুকানোর জায়গা) মধ্যে আটি বাঁধা অবস্থায় পচন ধরেছে। রোদ না থাকায় সেগুলো শুকানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কৃষকদের মধ্যে এখন চলছে হাহাকার। নিজেদের খাদ্য সংকট ও হালের বলদের খাদ্য সংকটে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। আবার অনেকে মহাজনের ঋণ পরিশোধ কীভাবে করবেন তা নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়েছেন।
হবিগঞ্জ কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে জেলার আটটি উপজেলায় প্রায় এক লাখ ১৬ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছিল। কিন্তু চৈত্রের শেষের দিকে অকাল বন্যা ও গত তিন দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলার গুঙ্গিয়াজুরি হাওর, গণকির হাওর, ভরগাঁও হাওর, কালুয়ার বিল, আতুকুড়া হাফরার বিল ও খাগাউড়া হাওরসহ অধিকাংশ জমির ফসল তলিয়ে গেছে।
আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) টিটন খীসা জানান, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী আজমিরীগঞ্জের সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমি তলিয়ে সফল নষ্ট হয়েছে। এখনো যেসব ফসল পানির ওপরে রয়েছে, সেগুলো আধা কাঁচা অবস্থায় কাটার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ইউএনও আরো বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহযোগিতার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। এরই মধ্যে সরকারের পক্ষে থেকে ১৬ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এগুলো ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।
জেলার বানিয়াচং উপজেলায় ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইকবাল আজাদ জানান, উপজেলার ২০ হাজার হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ফজলুর রহমান বলেন, অসময়ে বন্যা, গত তিনদিনের অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ, লাখাই, নবীগঞ্জসহ সাতটি উপজেলার প্রায় ৪৩ হাজার হেক্টর জমির ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে।
এই কর্মকর্তা বলেন, কৃষকদের ক্ষতির বিষয়টি তাঁরা মনিটরিং করছেন। সরকারিভাবে যেটুকু সহায়তা করা সম্ভব তা করা হবে।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সৈকত হোসেন জানান, বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় নদীর পানি বাড়ায় হাওরে পানি বাড়ছে। হবিগঞ্জ শহরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া খোয়াই ও আজমিরীগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।