মৃত্যুর মিছিলের পরও থেমে নেই পাহাড় কাটা
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2017/07/03/photo-1499068075.jpg)
পাহাড় ধসে ব্যাপক প্রাণহানির পরও বান্দরবানে পাহাড় কাটা বন্ধ হয়নি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জেলা সদরের কালাঘাটা এলাকায় কয়েকদিন ধরেই ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক পাহাড় কাটার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।
অবশ্য গত শনিবার সন্ধ্যায় পাহাড় কাটার সময় মোহাম্মদ সেলিম (৩৫) নামের এক শ্রমিককে আটক করেছে পুলিশ। তবে গতকাল রোববার ভোরেও ওই এলাকায় পাহাড় কাটতে দেখা গেছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, জেলা সদরের কালাঘাটা এলাকায় বান্দরবান-রোয়াংছড়ি উপজেলা সড়কের পাশে লাল বালি মাটির বিশাল একটি পাহাড় কাটা হচ্ছে। গত মাসে বুলডোজার দিয়ে সেখানে পাহাড় কাটা হয়েছিল। কিন্তু পাশের এলাকায় পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনার পর কয়েকদিন পাহাড় কাটা বন্ধ ছিল। এখন আবারও কাটা হচ্ছে সৌদি প্রবাসী মোহাম্মদ নূরের মালিকাধীন বিশাল পাহাড়টির একাংশ। যে স্থানটিতে পাহাড় কাটা হচ্ছে তার পাশেই রয়েছে একটি মসজিদ ও কিছু ঘরবাড়ি। বালি মাটির এই পাহাড়টি কাটার ফলে যেকোনো সময় এই মসজিদ ও বাড়িঘরের ওপর পাহাড়টি ধসে পড়ে প্রাণহানি ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।
কালাঘাটা ছাড়াও জেলা সদরের বনরুপাপাড়া, ফ্রান্সিঘোনা, ইসলামপুরসহ বিভিন্ন স্থানে বসতি স্থাপনের জন্য পাহাড় কাটা হচ্ছে। গতকালও বান্দরবানে বৃষ্টি হয়েছে। ভারি বৃষ্টিপাত হলে বান্দরবানে এসব স্থানে আবারও পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে।
পাহাড় কাটায় নিয়োজিত শ্রমিক মোহাম্মদ সেলিম জানান, পাহাড়ের জায়গাটি সৌদি প্রবাসী নূরু নামে এক ব্যক্তি কিনেছেন। তাঁর নির্দেশেই ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য পাহাড়টি কেটে সমান করা হচ্ছে। তবে প্রশাসনের অনুমতি আছে কি না, তা জানেন না শ্রমিক সেলিম।
শিরিনা আক্তার, জাফর আলমসহ বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, কিছু দিন আগে বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে পাশের এলাকায় ছয়জনের মৃত্যু হয়েছিল, সেদিন এখানেও পাহাড় ধসে সীমানা খুঁটিসহ পাহাড়ের একটি অংশ ধসে পড়েছিল। অল্পের জন্য তাঁরা রক্ষা পেয়েছেন। আবারও যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে। এ জন্য বৃষ্টির সময় আতঙ্কে তারা ঘুমাতে পারেন না।
তবে পাহাড় কাটার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সৌদি প্রবাসী মোহাম্মদ নুরু। তিনি বলেন, ‘আমি কোনো পাহাড় কাটছি না। যেখানে পাহাড় কাটা হচ্ছে, সে জায়গাটিও আমার নয়। আমার নাম ভাঙিয়ে হয়তো অন্য কেউ পাহাড় কাটতে পারে, সেটি আমার জানা নেই।’
পাহাড় কাটার বিষয়টি নিশ্চিত করে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিক উল্লাহ বলেন, ‘পাহাড় কাটার সময় কালাঘাটা থেকে এক শ্রমিককে আটক করা হয়েছে। অভিযানের সময় মালিককে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি।’
জেলা প্রশাসনের হিসাব মতে, পাহাড় ধসে ২০০৬ সালে জেলা সদরে তিনজন, ২০০৯ সালে লামা উপজেলায় শিশুসহ ১০ জন, ২০১০ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় পাঁচজন, ২০১১ সালে রোয়াংছড়ি উপজেলায় দুজন, ২০১২ সালে লামা উপজেলায় ২৮ জন, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১০ জন, ২০১৩ সালে সদরের কালাঘাটায় দুজন, ২০১৪ সালে সদরে চারজন, ২০১৫ সালে জেলা সদরের বনরুপাপাড়ায় তিনজন, লামা উপজেলার হাসপাতালপাড়ায় ছয়জন এবং ২০১৭ সালের জুন মাসে জেলা শহরে শিশুসহ ছয়জন নিহত ও ১১ জন আহত হয়েছে।
বান্দরবানে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা বাড়লেও প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে পাহাড় কেটে আবাসস্থল তৈরির প্রক্রিয়া।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ডি এ মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী জানান, পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ অবৈধ। পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের বসতি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাহাড় কাটা ও ঝুঁকিপূর্ণ বসতি স্থাপন বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।