এখনো কাটেনি ঝর্ণার পরিবারের সেই দুঃস্বপ্ন
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদুল ফিতরের জামাতে জঙ্গি হামলার এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সেই দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে পারেননি নিহত গৃহবধূ ঝর্ণা রানী ভৌমিকের পরিবারের সদস্যরা। সে সময় অনেকে সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও তা শুধু কথার কথা হয়েই আছে। বাস্তবে পরিবারের সদস্যরা কঠোর সময় পার করছেন।
ঝর্ণা রানী ভৌমিকের স্বামী গৌরাঙ্গ নাথ ভৌমিক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এই শোক এখনো আমরা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। ঘটনার পর অনেকেই অনেক ধরনের সহায়তার কথা জানালেও বাস্তবে কিছুই পাননি।’
গৌরাঙ্গ নাথ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পরিবারের দুঃখ-বেদনার কথা জানাতে চান। পাশাপাশি তিনি এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারও দাবি করেন।
গত বছর ৭ জুলাই দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতের চর শোলাকিয়া সবুজবাগ মোড়ে মুফতি মোহাম্মদ আলী জামে মসজিদের সামনে পুলিশ সদস্যদের ওপর আচমকা হামলা চালায় সশস্ত্র জঙ্গিরা। হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন দুই পুলিশ সদস্য ও এক গৃহবধূ। এ ছাড়া গুরুতর আহত হন আট পুলিশসহ কয়েকজন নিরীহ মানুষ। ঘটনার সময় পুলিশের গুলিতে এক জঙ্গিও নিহত হয়।
এ ঘটনার তদন্তকাজ এক বছরেও শেষ করতে পারেনি পুলিশ।
ঝর্ণা রানী ভৌমিকের বড় ছেলে বাসুদেব ভৌমিক জানান, মায়ের মৃত্যুতে পরিবারটি লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। বাবা যেমন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছেন, তেমনি ছোট ভাইটিও মায়ের শোকে লেখাপড়াতে মন বসাতে পারছে না।
ঝর্ণা রানী ভৌমিকের ছোট ছেলে ছাত্র শুভ দেব ভৌমিক এখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। সে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, ‘মাকে ছাড়া আমার কিছুই ভালো লাগে না।’
শুধু ঝর্ণা রানী ভৌমিকের পরিবারের সদস্যরা নন, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় এলাকাবাসীও এখনো ভুলতে পারেননি সেই দুঃসহ স্মৃতি। ব্যাংক কর্মকর্তা নীরেন্দ্র চন্দ্র দাশ, দলিল লেখক মো. হাবীবুর রহমান জানান, সেদিনের কথা মনে হলে তাঁরা এখনো আঁতকে ওঠেন। শিশুদের মন থেকে সেই ঘটনা এখনো মুছে যায়নি।
এদিকে ঘটনার পর এক বছর পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এখনো তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র জমা দিতে পারেনি। হামলার পেছনে জড়িত অস্ত্রদাতা, অর্থদাতা ও মদদদাতাদের চিহ্নিত করতেই এই বিলম্বের কারণ বলে পুলিশ জানিয়েছে।
মামলায় আসামি ঘটনাস্থলে আটক জাহিদুল হক ওরফে তানিম, আনোয়ার হোসেন ও জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী জেলহাজতে আছে। এ ছাড়া ঘটনার সময় আটক পুলিশের গুলিতে আহত শফিউল ইসলাম ওরফে ডন গত বছরের ৪ আগস্ট ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যায়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কিশোরগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোর্শেদ জামান জানান, এখনো মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তাই এ মামলার অভিযোগপত্র দিতে আরো সময় লাগবে। তবে তদন্তে অনেক অগ্রগতি রয়েছে।
হামলার তিন দিন পর ১০ জুলাই শফিউল ইসলাম ওরফে ডন ও জাহিদুল হক তানিমকে আসামি করে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ছয়টি ধারায় দায়েরকৃত মামলায় অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামি করা হয়। পাকুন্দিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ সামছুদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।