খেজুরের ডাল আর টর্চলাইট দিয়ে রবিউলকে হত্যা
মাছ চুরির অপরাধে বরগুনার শিশু রবিউলকে হত্যা করেছেন বলে স্বীকার করেছেন মিরাজ। আজ বৃহস্পতিবার বরগুনার আমতলীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম বৈজয়ন্ত বিশ্বাসের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে একথা জানিয়েছেন শিশু রবিউল হত্যার প্রধান আসামি মিরাজ (২৫)।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, আদালতে সহজ-সরল ভাষায় খোলামেলা স্বীকারোক্তি দেন মিরাজ। তিনি জানান, বেশ কিছুদিন ধরে তার জালের মাছ চুরি হওয়ায় তিনি শিশু রবিউলকে সন্দেহ করেন। এসব বিষয়ে রবিউলের বাবা-মাকেও সাবধান করে দেন তিনি। এরপর গত সোমবার রাতে মিরাজ মাছ চোর ধরার জন্য ওঁত পেতে থাকেন। রাত ১২টার দিকে তার জালের কাছে শিশু রবিউলকে আসতে দেখে তাকে তার হাতে থাকা চার ব্যাটারির একটি টর্চলাইট এবং খেজুরের ডাল একত্রিত করে সজোরে রবিউলের মাথায় আঘাত করেন মিরাজ। আঘাত পেয়ে দৌড়ে পালানোর সময় অন্ধকারে পাশের একটি তালগাছে ধাক্কা খেয়ে অচেতন হয়ে পড়ে শিশু রবিউল।
রবিউল মারা গেছে মনে করে অচেতন দেহটি পাশের খালে ফেলে দেন মিরাজ।
সকালে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম বৈজয়ন্ত বিশ্বাসের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার পরে মিরাজকে বরগুনার জেলহাজতে পাঠানো হয়।
বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক জানান, শত্রুতার জের ধরে রবিউলকে হত্যা করেন মিরাজ। হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহৃত টর্চলাইট আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে সব কিছু এখন প্রকাশ করা যাবে না বলে জানান পুলিশ সুপার।
এ ঘটনায় মিরাজের সঙ্গে আর কেউ ছিল কি না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানান বিজয় বসাক। এ ছাড়া মিরাজকে পুলিশের হেফাজতে নিয়ে জ্ঞিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কি না তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলার প্রয়োজনে তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি প্রয়োজন মনে করেন তবে অবশ্যই তাঁকে হেফাজতে নেওয়ার জন্য আবেদন করবে পুলিশ।
তবে মিরাজের পক্ষে একা রবিউলকে হত্যা করা সম্ভব নয় বলে দাবি করেছেন শিশুটির বাবা দুলাল মৃধা। পুলিশ এ বিষয়ে যথাযথ তদন্ত করলে সব তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে আশা করেন তিনি।
গতকাল বুধবার আসরের নামাজের পর জানাজা শেষে নিজ বাড়িতে দাফন করা হয় শিশু রবিউলকে। এ সময় শত শত গ্রামবাসী রবিউলের জানাজায় অংশ নেয়।
গত সোমবার রাতের কোনো একসময় মাছ চুরির অভিযোগে শিশু রবিউলকে হত্যা করেন প্রতিবেশী মিরাজ। মঙ্গলবার বিকেলে আমখোলা গ্রামের খালপাড়ে রবিউলের লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা তার স্বজনদের খবর দেয়।
পরে রবিউলের বাবা দুলাল মৃধার উপস্থিতিতে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
রবিউলের বাবা বাদী হয়ে তালতলী থানায় মিরাজকে অভিযুক্ত করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রধান আসামি মিরাজকে বুধবার সকালেই গ্রেপ্তার করে তালতলী থানার পুলিশ।
বরগুনার তালতলী উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের ছোট আমখোলা গ্রামের ১০ বছরের ছোট্ট শিশু রবিউল আউয়াল। স্থানীয় ফরাজীবাড়ি দাখিল মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত সে। রবিউলের বড় বোন খাদিজা দশম শ্রেণির ছাত্রী।
ছোট বোন জান্নাতি সবে হাঁটতে শিখেছে। তালতলী বাজারে রবিউলের বাবা দুলাল মৃধার খুচরা যন্ত্রাংশের একটি ছোট্ট দোকানের আয় দিয়েই চলে রবিউলদের সংসার।