শাকিব খানদের স্থায়ী ঠিকানা বের করতে পারেনি পুলিশ!

তিন মাসেও ‘রাজনীতি’ সিনেমার অভিনেতা শাকিব খান, পরিচালক বুলবুল বিশ্বাস ও প্রযোজক আশফাক আহমেদের স্থায়ী ঠিকানা জানতে পারেনি হবিগঞ্জের গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এই কারণ দেখিয়ে এখনো ওই আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি তারা।
আজ বুধবার দুপুরে হবিগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সম্পা জাহানের আদালতে মামলাটির শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে বিচারক মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ১৫ দিনের ভেতর দিতে জেলা ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন।
‘রাজনীতি’ সিনেমায় মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করে হয়রানির অভিযোগ এনে চিত্রনায়ক শাকিব খানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৯ অক্টোবর হবিগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে মামলা করেছিলেন জেলার বানিয়াচং উপজেলার ইজাজুল মিয়া (২৫)। মামলায় তিনি শাকিব খানসহ তিন আসামির কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সম্পা জাহান সেদিন মামলাটি গ্রহণ করে জেলা ডিবি পুলিশকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছিলেন। এরপর ১৮ ডিসেম্বর ছিল মামলার ধার্য তারিখ। সেদিন তদন্ত প্রতিবেদন জমা না দিয়ে সময় চেয়ে আবেদন করে ডিবি পুলিশ। আদালত তখন দ্রুত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তাগিদ দেন এবং আজ ৭ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন। আজও ডিবি পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে না পেরে সময়ের আবেদন করে। আদালত আজ ১৫ দিন সময় বেঁধে দেন।
তদন্ত প্রতিবেদন জমা না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে জেলা ডিবি পুলিশের ওসি মো. শাহ আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘শাকিব খানসহ তিন আসামির বাড়ি তিন জেলায়। তাঁদের স্থায়ী ঠিকানা বের করতে না পারায় তদন্ত প্রতিবেদন দিতে দেরি হচ্ছে। আশা করছি খুব শিগগির স্থায়ী ঠিকানা বের করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।’
মামলার কারণ
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী এম এ মজিদ জানান, গত বছরের ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায় ‘রাজনীতি’ চলচ্চিত্র। সেখানে একটি দৃশ্যে নায়ক শাকিব খান নায়িকা অপু বিশ্বাসকে একটি মুঠোফোন নম্বর দেন। ওই নম্বরটির গ্রাহক বাদী ইজাজুল। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাওয়ার পর শাকিব খানের মুঠোফোন নম্বর মনে করে অসংখ্য নারী-পুরুষ ইজাজুলকে ফোন করতে থাকেন। দেশ-বিদেশ থেকে শাকিবভক্তদের আসা এসব ফোনে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন বাদী ইজাজুল।
আইনজীবী মজিদ আরো জানান, ‘রাজনীতি’ চলচ্চিত্রে ইজাজুলের নম্বরটি দেওয়া হয়েছে শাকিব খানের নম্বর হিসেবে। পুরো নম্বরটি প্রকাশ হওয়ায় সবাই ইজাজুলকে মুঠোফোনে কল দিচ্ছেন। ফোন রিসিভ করতে করতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন ইজাজুল।
বাদী ইজাজুল মিয়া জানান, দেশ-বিদেশ থেকে আসা শাকিবভক্তদের ফোনে তিনি অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। তিনি (ইজাজুল) শাকিব খান কি না, তা যাচাইয়ের জন্য তানিয়া নামের এক তরুণী খুলনা থেকে তাঁর হবিগঞ্জ চলে আসেন। পরে সেই তরুণীকে গাড়িতে তুলে বিদায় দিয়েছেন তিনি। এই খবর শুনে তাঁর (ইজাজুল) স্ত্রী রাগ করেন।
ইজাজুল আক্ষেপ প্রকাশ করে জানান, তাঁর স্ত্রীকে কিছুতেই বোঝানো যায়নি। নিজেকে নায়ক শাকিব খান পরিচয় দিয়ে পরনারীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার অভিযোগ এনে স্ত্রী মিশু আক্তার বাপের বাড়িতে চলে গেছে ১৭ মাস বয়সী একমাত্র শিশুকন্যা ইমুকে নিয়ে। পরে ‘রাজনীতি’ সিনেমা দেখে স্ত্রী মিশুর ভুল ভাঙে। কিন্তু এখনো বাড়ি ফিরেননি। অন্যদিকে দিনে কয়েকশ ফোন আসার কারণে মোবাইল নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয় সারা দিন। এ কারণে ব্যবসায়ী বাদল তাঁর সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকের চাকরি থেকে ইজাজুলকে বাদ দিয়েছেন।
অতিষ্ঠ হয়ে গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর ইজাজুল বানিয়াচং থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। টাকা না থাকায় প্রথমে মামলা করতে না চাইলেও নিরুপায় হয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি গত বছরের ২৯ অক্টোবর শাকিব খান, রাজনীতি সিনেমার পরিচালক বুলবুল বিশ্বাস ও প্রযোজক আশফাক আহমেদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন।
সিনেমার কোথায় ছিল সেই নম্বর
‘রাজনীতি’ ছবিতে ইজাজুলের নম্বরটি ব্যবহার করেন ছবির পরিচালক বুলবুল বিশ্বাস। এর একটি গানের শেষে শাকিব খানকে জড়িয়ে ধরে অপু বিশ্বাস বলেন, ‘এভাবে বারবার আমি আর কোনোদিন আমায় ছেড়ে চলে যেতে দেবো না আমার স্বপ্নের রাজকুমার।’
জবাবে শাকিব খান বলেন, ‘আমিও তোমাকে ছেড়ে যাব না আমার রাজকুমারী।’ তখন অপু ফের বলেন, ‘আমার ফেসবুক আইডি যে রাজকুমারী, তুমি জানলে কী করে?’ শাকিব আবার বলেন, ‘যেভাবে তুমি জানো আমার মোবাইল নম্বর ০১৭১৫...।’
ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই শাকিব খান মনে করে ইজাজুলকে ফোনের পর ফোন দিতে শুরু করেন শাকিবভক্তরা। এর মধ্যে নারীভক্তদের কলই বেশি। গড়ে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ কল আসে বলে দাবি করেছেন ইজাজুল।