শিক্ষা ক্ষেত্রে সুবাতাস ঢোকেনি : মেনন

সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে সুবাতাস ঢোকেনি। এবারের প্রশ্নপত্র ফাঁসের মহামারী কেবল পরীক্ষার্থী নয়, তাদের অভিভাবকদেরও সরকার সম্পর্কে বিরূপ ধারণার জন্ম দিয়েছে।
রাষ্ট্রপতির ভাষণে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আজ সোমবার ৩০তম দিনে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, বাংলাদেশ শুধু এগিয়েই যাচ্ছে না, একটি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে। বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের কাছে উদাহরণ। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দেশের প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, অনাথ, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, হিজড়া, বেদেসহ দুস্থ অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করছে। এই খাতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ৬০ লাখ মানুষকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে।
মেনন বলেন, কিছু কিছু দুভার্গ্যজনক ঘটনা সরকারের সব অর্জনকেই ধুলিসাৎ করে দিচ্ছে। ২০১০ সালে সরকার অত্যন্ত সাফল্যজনকভাবে জাতীয় শিক্ষানীতি গ্রহণ করে। এই সরকারের প্রথম থেকেই বছরের প্রথম দিন বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের বই দেওয়া হচ্ছে, যার সংখ্যা এবার দাঁড়িয়েছে ৩৫ কোটি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে উপবৃত্তি ছাড়াও উচ্চতর শিক্ষা, গবেষণার জন্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। দেশে বিপুল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। যেসব উপজেলায় কোনো সরকারি ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ নেই সেসব জেলায় একটি করে স্কুল ও কলেজকে সরকারি করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর মতোই তাঁর কন্যা ২৬ হাজার ১৯৩টি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেছেন।
মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতের নৈরাজ্য চূড়ান্ত। খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। সরকারকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন জোগাতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির টাকা ফিরে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না জানা নেই।
রাশেদ খান মেনন বলেন, দুর্নীতির জন্য খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড হয়েছে। এটা বিএনপি-জামায়াত জোট শাসনের সঙ্গে তারেকের দুর্নীতির ক্ষুদ্রাংশ। অনেকে এর পেছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি খুঁজছে। কিন্তু ১৪ দলের ২৩ দফায় দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তাই পূরণের সূচনা হলো মাত্র। দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নকে বিচারের আওতায় আনা ও তাকে পরিণতিতে নিয়ে যাওয়া জরুরি।
মন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার এই মামলা শেষ করতে ১০ বছর লেগেছে। এই দীর্ঘসূত্রতা জনমনের আস্থাকে কমিয়ে দেয়। জনগণ আশা করে এই ধারা অব্যাহত থাকবে। কেবল দুর্নীতি বন্ধ করতে পারলেই জাতীয় প্রবৃদ্ধি আরো ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। জনগণ আশা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ব্যাংক লুট, জালিয়াতি, অর্থ পাচার—এসব ক্ষেত্রে দুর্নীতির তদন্ত করবে, আইনের আওতায় আনবে। পাকিস্তান যদি পানামা পেপারস-প্যারাডাইস পেপারস নিয়ে তদন্ত করতে পারে, বাংলাদেশ পারবে না কেন।
সমাজকল্যাণমন্ত্রী বলেন, এই সরকার সব দলের অংশগ্রহণে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন চায়। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করবে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট তাদের পুরোনো গান গেয়েই যাচ্ছে। আসলে নির্বাচন নয়, তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়। সে কথাই তারা বারবার বলছে।
মেনন বলেন, ‘আমরা সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী-জঙ্গিবাদী শক্তিকে, দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের ধারকদের রুখে দিতে পেরেছি। কিন্তু নিঃশেষ করতে পারি নাই। তারা পাল্টা আক্রমণ করতে সদা তৎপর। এই সরকার তাদের কলিজায় হাত দিয়েছে।’ তিনি বলেন, যে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের তারা বিদেশি দূতাবাসে পুনর্বাসিত করেছিল, ইনডেমনিটি আইনে তাদের বিচার বন্ধ করে রেখেছিল তাদের বিচার করে ফাঁসি দিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে তারা জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিল। সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে। বিডিআর বিদ্রোহের বিচার হয়েছে।’