গণপিটুনির নামে তিন ব্যবসায়ীকে হত্যা!
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/08/26/photo-1440587084.jpg)
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় ‘ছেলেধরা’ সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত তিনজন ছিলেন গরু ব্যবসায়ী। এঁদের মধ্যে আলাউদ্দিন ওরফে আলাল ছিলেন নাটোর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য। তাঁদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে অজ্ঞাতনামা তিন হাজারজনকে আসামি করে থানায় মামলা করা হয়েছে।
এদিকে আলাউদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা তাঁকে গরু ব্যবসায়ী বলে দাবি করলেও লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়নের আমিরগঞ্জ গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, আলাউদ্দিনকে তাঁরা পকেটমার হিসেবেই চিনতেন। অধিকাংশ সময় থাকতেন নিরুদ্দেশ অবস্থায়। বাড়ি ফিরতেন মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে।
পাবনার পুলিশ জানায়, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সাঁথিয়া উপজেলার সিঅ্যান্ডবি মোড়ের চতুরহাট এলাকায় ‘ছেলেধরা’ সন্দেহে আলাউদ্দিন ওরফে আলাল মেম্বার (৫০), আসলাম হোসেন (৪০) ও আবু বক্কার সিদ্দিককে (৪১) হত্যা করা হয়। পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে নিহতদের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে আজ বুধবার সকালে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আলাউদ্দিনের বাড়ি নাটোর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়নের আমিরগঞ্জ গ্রামে। আসলামের বাড়ি দিনাজপুর সদর উপজেলার পশ্চিম শিবরামপুর গ্রামে ও আবু বক্কারের বাড়ি পাবনা সদর উপজেলার গাছপাড়া গ্রামে।
সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিদ মাহমুদ খান জানান, নিহত আলাউদ্দিন ওরফে আলালের ভাই রানা শেখ বাদী হয়ে গতকাল রাতে অজ্ঞাতনামা তিন হাজার ব্যক্তিকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। এখনো কাউকে গ্রেপ্তার বা আটক করতে পারেনি পুলিশ।
চতুরহাটের কাঠ ব্যবসায়ী আবদুর রাজ্জাক জানান, কয়েকজন লোক ওই তিনজনকে কলার চেপে ধরে ঘটনাস্থলে এনে অপহরণকারী বলে পেটাতে থাকেন।
ঘটনাস্থলের সামনে অবস্থিত প্রতিভা বিপণনের মালিক রাজন (৩৫) বলেন, দোকানের সামনে তিন ব্যক্তিকে পেটানো দেখে দোকান বন্ধ করে চলে যাই।
এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলার লোকজন বেশ কিছুদিন ধরে গুম ও অপহরণ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। গত দুই মাসে বেশ কয়েকটি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এদের পরে পুলিশ উদ্ধার করে। এক শিশুকে অপহরণের ঘটনায় ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণও আদায় করা হয়।
সাঁথিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এস এম আবুল কাশেম আজাদ জানান, গতকাল মঙ্গলবার রাত সোয়া ৯টার দিকে নিহতের আত্মীয়স্বজন এসে তাঁদের শনাক্ত করেন এবং তাঁরা গরু ব্যবসায়ী বলে জানান।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে পাবনার পুলিশ সুপার আলমগীর কবির সাংবাদিকদের জানান, ছেলে ধরা সন্দেহে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হলেও এর পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে, যা তদন্তের মাধ্যমে জানা যাবে।
এদিকে গণপিটুনিতে নিহত আলাউদ্দিনের লাশ আজ বুধবার দুপুরে নাটোর সদর উপজেলার আমিরগঞ্জ গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়। খবর পেয়ে এলাকার অনেক মানুষ ছুটে যান লাশ দেখতে।
আলাউদ্দিনের বড় ভাই জয়নাল আবেদীন বলেন, আলাউদ্দিনের সঙ্গে তাঁর ভায়রার জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এর জের ধরে তাঁকে পরিকল্পিতভাবে পাবনায় হত্যা করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
আমিরগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা নূর হোসেনসহ একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, আলাউদ্দিন একসময় পরিবহন শ্রমিক ছিলেন। তবে এলাকায় অধিকাংশ মানুষ তাঁকে পকেটমার হিসেবেই চিনতেন। ভালো হয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করায় এলাকার লোকজন তাঁকে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত করেন। কিন্তু অপকর্ম ছাড়তে না পারায় পরে আর লোকজন তাঁকে নির্বাচিত করেননি। এর পর থেকে আলাউদ্দিন রহস্যময় জীবনযাপন করতেন। অধিকাংশ সময় থাকতেন নিরুদ্দেশ অবস্থায়। বাড়ি ফিরতেন মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে। আমিরগঞ্জ বাজারে তাঁর নিজের মার্কেট, জমি-জমা রয়েছে। অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ ভালো।