‘গাজীপুর সিটির মেয়রের চেয়ার অল্প বয়স্কদের জন্য নয়’

গাজীপুর সিটি করপোরেশনে বিএনপি মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার বলেছেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়রের চেয়ার অতি গুরুত্বপূর্ণ। এটি অল্প বয়স্কদের চেয়ার নয়। এটি জ্ঞানী ও বয়স্ক মানুষের চেয়ার।
মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার আরো বলেন, মেয়র নির্বাচন কোনো ছেলে খেলা নয়। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আমার কাছে ভোট চেয়েছে। এটি ছেলেমি ছাড়া কিছুই নয়। এটি তাঁর একটি ফাইজলামি। বয়সের অপরিপক্কতার কারণে সে এসব বলতে পারছে।
কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে আজ সোমবার বিকেলে সিটি করপোরেশনের কাউলতিয়া ও সন্ধ্যায় বাসন এলাকায় গণসংযোগ করেন হাসান উদ্দিন সরকার। এ সময় তিনি স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী সভায় যোগ দেন। সেখানে এসব কথা বলেন তিনি।
এর আগে আজ সকাল ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত নিজ বাসভবনে দলের কাশিমপুর অঞ্চলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ পুনর্মিলনী ও বৈঠক করেন হাসান উদ্দিন সরকার। বৈঠকে কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান শওকত হোসেন সরকার গ্রেপ্তার হওয়ায় তাঁর অনুপস্থিতিতে নির্বাচনী ঝুঁকি মোকাবিলার কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।
এ সময় ২০ দলীয় জোটের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সাংসদ ফজলুল হক মিলন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, গাজীপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি সালাহ উদ্দিন সরকার, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হোসেন, টঙ্গী থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম শুক্কুর, জেলা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি প্রভাষক বসির উদ্দিন আহমেদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির রাজুসহ কাশিমপুর অঞ্চলের বিএনপি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় কাশিমপুর অঞ্চলের নেতারা অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি নেতা শওকত চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করে এলাকার নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। স্থানীয় চক্রবর্তী ফাঁড়ির পুলিশ দিয়ে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।
এছাড়াও বিএনপির রফিকুল ইসলাম বাচ্চু ও শামসুল আলম তোফাসহ একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে স্থানীয় নেতাকর্মীরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে সোমবার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ধানের শীষের পক্ষে পৃথক পৃথক গণসংযোগ করেন।
নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় গত ৩১ মার্চ। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১৫ মে এ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সীমানা নির্ধারণ নিয়ে জটিলতাকে কেন্দ্র করে হাইকোর্ট গত ৬ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করে আদেশ দেয়। এতে স্থগিত হয়ে যায় নির্বাচনী সব ধরনের কার্যক্রম। পরে হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থী এবং নির্বাচন কমিশন। শুনানি শেষে ওই স্থগিতাদেশ স্থগিত করে নির্বাচন অনুষ্ঠান করার আদেশ দেন উচ্চ আদালত। উচ্চ আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২৬ জুন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে দ্বিতীয় দফায় ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন। নতুন ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী প্রার্থীরা আজ ১৮ জুন থেকে এ নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু করেন প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকরা।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীসহ সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে ছয়জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনীত এবং একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। এছাড়াও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ২৫৪ জন এবং ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৮৪ জন প্রার্থী এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবারের নির্বাচনে একটি ওয়ার্ডে সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে একজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এবার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ এবং নারী ভোটার ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১।