যুদ্ধজাহাজ নির্মাণকাজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

দেশে প্রথমবারের মতো দুটি বড় যুদ্ধজাহাজ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করতে আজ রোববার খুলনায় যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুপুরে খুলনা শিপইয়ার্ডে তাঁর এই নির্মাণকাজের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে খুলনা মহানগরী এলাকায় সাজসাজ রব বিরাজ করছে। বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত করতে দিন-রাত কাজ করছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) ও সড়ক বিভাগ। সড়কদ্বীপ (ডিভাইডার) নতুন করে রং করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে সড়কে নির্মাণ করা হয়েছে শতাধিক তোরণ। সড়কদ্বীপে ঝুলছে ফেস্টুন ও বিলবোর্ড। নগরীর নৌঘাঁটি তিতুমীর থেকে খুলনা শিপইয়ার্ড পর্যন্ত সড়ক এবং সড়কদ্বীপ বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত শুক্রবার বিকেল থেকে মাঠে নেমেছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ। নগরীর প্রবেশদ্বার ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। নগরীতে টহল দিচ্ছে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম।
রূপসা নদীতেও নিরাপত্তা জোরদার করেছে কোস্টগার্ড। নদীতে অবস্থানরত জাহাজগুলোকে গতকাল শনিবার দুপুরের মধ্যে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
শিপইয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, এত দিন চীন থেকে এই যুদ্ধজাহাজ কেনা হতো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় দেশের মাটিতে এই জাহাজ নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে ৩০-৩৫ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। এই কাজের উদ্বোধন করতেই খুলনায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি খুলনা শিপইয়ার্ডে বাংলাদেশ নৌ ফাউন্ডেশনের জন্য ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি কনটেইনার জাহাজের উদ্বোধন করবেন তিনি।
খুলনার জেলা প্রশাসক মো. মোস্তফা কামাল জানান, প্রথমে হেলিকপ্টারযোগে মংলায় যাবেন প্রধানমন্ত্রী। বেলা ১১টার দিকে বানৌজা মংলার হেলিপ্যাডে অবতরণ করবেন তিনি। দিগরাজের নৌঘাঁটিতে নৌবাহিনীর নতুন জাহাজ কে জে আলী, জাহাজ সন্দ্বীপ ও হাতিয়ার কমিশনিং এবং নবনির্মিত এলসিটি-১০৩ ও এলসিটি-১০৫-এর সংযুক্তকরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত মংলায় অবস্থান করে খুলনার উদ্দেশে রওনা দেবেন তিনি।
দ্বিতীয় পর্যায়ে হেলিকপ্টারে করে দুপুর ১টা ১০ মিনিটে খুলনায় নৌবাহিনীর বিএনএস তিতুমীর ঘাঁটিতে অবতরণ করবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে সড়কপথে যাবেন শিপইয়ার্ডে। জাহাজ নির্মাণকাজের উদ্বোধন শেষে সামরিক কর্মকর্তা ও সুধীজনদের উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে তাঁর। শিপইয়ার্ডের অনুষ্ঠান শেষে সড়কপথে তিতুমীর ঘাঁটিতে ফিরে জোহরের নামাজ, খাবার ও বিশ্রাম নেবেন। বিকেল ৪টায় হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত উপকমিশনার শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু জানান, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় পুলিশের দুই হাজার সদস্য মাঠে থাকবে। প্রথম দলটি শুক্রবার বিকেল থেকে মাঠে নেমেছে।
নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে চেকপোস্ট ছাড়াও প্রবেশদ্বার সিল করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দ্বিতীয় দলটি রোববার সকাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর সড়ক রুটের দুই পাশে, উঁচু ভবনে অবস্থান নেবে। র্যাবের আটটি টিম নিরাপত্তা কাজে যোগ দিয়েছে। নৌপথের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে কোস্টগার্ড।
কোস্টগার্ডের পশ্চিম জোনের জোনাল কমান্ডার রেজাউল হাসান বলেন, খুলনা ও মংলায় কোস্টগার্ডের উচ্চপর্যায়ের তিনটি করে মোট ছয়টি দল নৌপথের নিরাপত্তায় কাজ করবে। রূপসা নদীতে নোঙর করা কার্গোগুলোকে গতকাল শনিবার দুপুরের মধ্যে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আজ রোববার সকাল থেকে রূপসা নদীর সেতু থেকে রূপসা ঘাট পর্যন্ত সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউজ্জামান খান জানান, টানা বর্ষণে সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ তৈরি হয়েছিল। শ্রমিকরা ২৪ ঘণ্টা কাজ করে সড়ক চলাচল উপযোগী করেছেন। এ ছাড়া সড়কদ্বীপ রং করা হয়েছে। সড়কের দুপাশে অবৈধ স্থাপনাও উচ্ছেদ করা হয়েছে।
এদিকে, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ সভা করে নেভি গেট থেকে শিপইয়ার্ড পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল এ জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে পতাকা বিতরণ করেছেন খুলনা থানার সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে আসবেন তাঁর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, এস এম কামাল হোসেন।