নড়িয়ায় গৃহকর্মীর লাশ উদ্ধার, পরিবারের অভিযোগ হত্যা
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বৈশাখীপাড়া থেকে সুমাইয়া আক্তার প্রিয়া (১৫) নামের এক গৃহকর্মীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গতকাল সোমবার রাতে গ্রামের বাবুল চৌকিদারের বাড়ির একটি বসতঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়। পুলিশ এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা নথিভুক্ত করে। আজ মঙ্গলবার শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে কিশোরীর ময়নাতদন্ত হয়। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক যুবককে আটক করা হয়েছে।
হাসপাতালের চিকিৎসক বলছেন, প্রাথমিকভাবে শ্বাসরোধে হত্যা ও কিশোরী অন্তসত্ত্বা ছিল এমন আলামত পাওয়া গেছে।
এ দিকে গৃহকর্মীকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বলে পরিবারের অভিযোগ। প্রিয়া একই উপজেলার দক্ষিণ নড়িয়া গ্রামের বিল্লাল মকদমের মেয়ে।
নড়িয়া থানা ও মেয়েটির পারিবারিক সূত্র জানায়, নড়িয়া উপজেলার দক্ষিণ নড়িয়া গ্রামের বিল্লাল মকদমের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার প্রিয়া। প্রিয়ার আড়াই বছর বয়সে বাবা তাঁর মাকে রেখে চলে যায়। এর পর প্রিয়াকে নিয়ে তার মা নানার বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। চার বছর আগে প্রিয়াকে পাশের বৈশাখী পাড়ার বাবুল চৌকিদারের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজে দেওয়া হয়।
সোমবার রাতে বাবুল চৌকিদারের বাড়ি থেকে ফোন করে প্রিয়ার নানা বাড়িতে জানানো হয় বাবুল চৌকিদারের স্ত্রী অসুস্থ। তাদের সেখানে যেতে বলা হয়। প্রিয়ার মামি মুক্তা বেগম রাত ৯টার দিকে ওই বাড়িতে যান এবং গিয়ে দেখেন পুলিশ প্রিয়ার লাশ নামিয়ে মেঝেতে রেখেছে। রাতেই লাশ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে পরিবারের সদস্যদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। এর আগে নড়িয়া থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা নথিভুক্ত করা হয়। শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আব্দুস সোবাহান লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন।
চিকিৎসক আব্দুস সোবাহান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ময়নাতদন্তের পরে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে শ্বাসরোধ করে মেয়েটিকে হত্যা করা হয়েছে। মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার আলামত পাওয়া গেছে। তার দেহের ভিসেরা সংগ্রহ করা হয়েছে। রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য এগুলো ঢাকায় পাঠানো হবে।
নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকরাম আলী মিয়া বলেন, প্রথম দিকে মেয়েটির পরিবারের কোনো অভিযোগ ছিল না। তাই অপমৃত্যু মামলা করে লাশ ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পরে মৃত্যুটি রহস্যজনক মনে হচ্ছে। মেয়েটির সঙ্গে পাঁচক গ্রামের জনি সিকদার নামের একটি ছেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে আটক করা হয়েছে।
আজ দুপুরে প্রিয়ার নানাবাড়ি দক্ষিণ নড়িয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রিয়ার মা রিনা বেগম বিলাপ করতে করতে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলছেন। জ্ঞান ফিরলেই চিৎকার করে বলছেন, বাবুল আমার মেয়েকে মেরে ফেলছে। তোমরা আমার মেয়েকে এনে দাও। স্বজনরা রিনা বেগমকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
প্রিয়ার মামি মুক্তা বেগম বলেন, প্রিয়ার বাবা নেই। সে আমাদের কাছে থাকে। আমরা গরিব মানুষ, অভাবের তাড়নায় মেয়েটিকে গৃহকর্মীর কাজে দিয়েছিলাম। তাঁকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আমরা হত্যাকারীদের বিচার চাই।
বৈশাখীপাড়ায় গিয়ে বাবুল চৌকিদারকে পাওয়া যায়নি। তাঁর মুঠোফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তাঁর স্ত্রী কোহিনুর বেগম বলেন, প্রেমঘটিত ব্যাপার নিয়ে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। এতে আমাদের পরিবার জড়িত নয়।