৬০০ বছরের সাক্ষী!

পাবনার চাটমোহর উপজেলার বিলচলন ইউনিয়নের বোঁথড় গ্রাম। চাটমোহর পৌর সদর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তরে বড়াল নদীর বাঁধ পেরিয়ে হেঁটে ১০ মিনিট গেলেই সেই গ্রামে চোখে পড়বে এক অপূর্ব স্থাপত্য। বর্তমান নাম শেহরোজ জামে মসজিদ। বয়স আনুমানিক ৬০০ বছর।
পাঁচ-ছয়জনের নামাজ পড়ার জায়গা থাকায় এটিকে দেশের ক্ষুদ্রতম মসজিদ মনে করা হচ্ছে। এমনকি গোটা বিশ্বেই এত ছোট মসজিদ দ্বিতীয়টি আছে কি না, সে ব্যাপারে সন্দেহ আছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বোঁথড় গ্রামে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মসজিদটির দৈর্ঘ্য পাঁচ ফুট আর প্রস্থ ৮ ফুট। ছোট ছোট ইট, চুন ও সুঁড়কি মিশ্রণে তৈরি মসজিদের দেয়ালগুলো স্থাপত্যকলার অন্যতম নিদর্শন।তবে এটি কখন, কারা, কী উদ্দেশ্যে নির্মাণ করেছিলেন তার উত্তর জানা নেই স্থানীয়দের।
বোঁথড় গ্রামের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আনুমানিক ৬০০ বছরের পুরনো এই মসজিদ সম্পর্কে তাদের পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম শুনে আসছেন। মসজিদটি বনজঙ্গলে ঢাকা ছিল বলে কেউ সেখানে যেতেন না। স্বাধীনতার পর কিছুটা পরিষ্কার করে মসজিদটির পাশে দুটি টিনের ছাপরা তুলে একাই নামাজ আদায় করতেন বোঁথড় গ্রামের ছোহরাব হোসেন।
২০০৬ সালে প্রাচীন পুরাকৃর্তি অক্ষুণ্ণ রেখে মসজিদটি সংস্কারে আর্থিকভাবে সাহায্য করেন তৎকালীন চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান।মসজিদটি ঘিরে দেয়াল তোলা হয়েছে।
মসজিদ সম্পর্কে বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইউনুছ আলী সরকার বলেন, ‘এটা যে একটা ক্ষুদ্রতম প্রাচীন মসজিদ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এই মসজিদের জায়গার পুরাতন ডিএস রেকর্ডে দুই শতাংশ জমি মসজিদের নামে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে।’ মসজিদটির উন্নয়নে বর্তমানে কাজ অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
শতবর্ষী ভাদু মোল্লা বলেন, ‘মসজিদটি অনেক পুরনো আমলের।আমরা ছোট থেকেই শুনে আসছি এখানে একটা মসজিদ আছে।আমাদের মুরব্বিদের কাছে শুনেছি, অনেক আগে ইসলাম প্রচারের জন্য বিদেশ থেকে কয়েকজন পীর সাহেব এ দেশে এসেছিলেন। রাতে তাঁরা এখনো আত্মগোপন করে থাকতেন। তাঁরাই সম্ভবত এই মসজিদ তৈরি করেছিলেন নামাজ আদায়ের জন্য।
ইতিহাস যেটাই হোক না কেন,কালের সাক্ষী হয়ে টিকে থাকা মসজিদ হিসেবে এই প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শনকে দেশের সবচেয়ে ছোট মসজিদ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। একই সঙ্গে এ সংক্রান্ত গবেষণা ও সংরক্ষণের জন্য সরকারি পর্যায় থেকে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ারও দাবি তাঁদের।