মানবতাবিরোধী অপরাধ : পলাতক জব্বারের রায় কাল

পিরোজপুরে জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবদুল জব্বারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় দেওয়া হবে আগামীকাল মঙ্গলবার। যদিও পলাতক থাকায় তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আজ সোমবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই দিন ধার্য করেন। এর আগে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর রায়ের জন্য মামলাটি অপেক্ষমাণ রাখেন ট্রাইব্যুনাল।
আবদুল জব্বারের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণ করার দাবি করে প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করেন।
অন্যদিকে, সরকার নিয়োজিত আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. আবুল হাসান বলেন, আবদুল জব্বারের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি প্রসিকিউশন। শুধু শান্তি কমিটির স্থানীয় চেয়ারম্যান হিসেবে ‘সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির’ অভিযোগ আনা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। এ জন্য তিনি আশা করেন, আসামি মামলা থেকে খালাস পাবেন। তবে আসামিপক্ষের কোনো আত্মীয়-স্বজন কাছ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাননি বলে জানান আবুল হাসান।
২০১৪ সালের ১৪ আগস্ট আবদুল জব্বারের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, ধর্মান্তরকরণ, লুটপাটসহ পাঁচটি অভিযোগ গঠন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ৩৬ জনকে হত্যা ও গণহত্যা, ২০০ জনকে জোর করে ধর্মান্তরিত করা, ৫৫৭টি লুট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ রয়েছে।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ২৪ জন সাক্ষী হাজির করে। তবে আসামিপক্ষ কোনো সাক্ষী হাজির করতে পারেনি। গত বছরের ২৯ এপ্রিল মামলার তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে জমা দেয় তদন্ত সংস্থা।
১৯৭২ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বিনোদবিহারী বিশ্বাসের ছেলে যজ্ঞেস বিশ্বাস বাদী হয়ে জব্বার ইঞ্জিনিয়ারকে প্রধান আসামি করে দুই শতাধিক রাজাকারের বিরুদ্ধে হত্যা, লুট, অগ্নিসংযোগ ও নির্যাতনের অভিযোগে মঠবাড়িয়া থানায় একটি মামলা করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মামলার সব নথি গায়েব হয়ে যায়।
ইঞ্জিনিয়ার আবদুল জব্বার ১৯৬৫ সালে আইয়ুব খানের আমলে এমপিএ নির্বাচিত হন। ‘৭০-এর নির্বাচনে মুসলিম লীগ থেকে মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা আসনে নির্বাচন করেন। তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আত্মগোপনে চলে যান তিনি। ১৯৭৫ সালের পর আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। পরে ১৯৮৬ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পিরোজপুর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালের ভোটারহীন নির্বাচনে আবারও নির্বাচিত হন আবদুল জব্বার।
১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে আবদুল জব্বারের বিরুদ্ধে টিন ও চাল আত্মসাতের মামলা হয়। এর পর কিছুদিন বিএনপির রাজনীতি করলেও ২০০১ সালে জাতীয় পার্টিতে ফিরে আসেন তিনি। পরে জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন।
জানা গেছে, বর্তমানে আবদুল জব্বার যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আছেন। সেখানে বড় মেয়ের বাসায় অবস্থান করছেন বলেও জানা যায়।
আবদুল জব্বারের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
প্রথম অভিযোগ : ১৯৭১ সালে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার ফুলবাড়ীতে দুই মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেন আবদুল জব্বার। এ ছাড়া নাথপাড়া ও কুলুপাড়ার শতাধিক বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেন।
দ্বিতীয় অভিযোগ : ফুলবাড়ীতে একজনকে হত্যা ও ৩৬০টি বাড়িতে লুট-অগ্নিসংযোগ।
তৃতীয় অভিযোগ : নলি এলাকায় ১১ জনকে হত্যা ও ৬০টি বাড়িতে লুট করে অগ্নিসংযোগ।
চতুর্থ অভিযোগ : প্রায় ২০০ হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে জোর করে ধর্মান্তরিত করা।
পঞ্চম অভিযোগ : আঙুল কাটা ও মঠবাড়িয়া থেকে ৩৭ জনকে আটক, লুট, নির্যাতন এবং ২২ জনকে হত্যা।