এ ঘটনায় তাঁরা কোথায়? তাঁরা এখানে নেই কেন?
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতির মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুলতবী করা হয়েছে।
আজ সোমবার পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার নয় নম্বর বিশেষ জজ শেখ হাফিজুর রহমান এ বিষয়ে আংশিক শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে বেগম খালেদা জিয়াকে আদালতে উপস্থিত করা হয়। এরপর শুনানি শুরু হয়ে চলে দুপুর ২টা পর্যন্ত। এ সময় গোলাপি রঙের শাড়ী পরিহিত আদালতের সামনে একটি হুইল চেয়ারে বসা ছিলেন খালেদা জিয়া। শুনানির শুরুতে তাঁর আইনজীবীরা এ মামলার জব্দকৃত আলমতের নথি চেয়ে একটি আবেদন করেন। ওই আবেদনের ওপর শুনানি হয় ১০ মিনিটের মতো। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেন, ‘মামলার মুল নথিতে জব্দকৃত আলামতের কোনো তালিকা বা নমুনা নেই। এ কারণে মামলার শুনানির জন্য ব্দকৃত আলামত নথি প্রয়োজন।’
অপরদিকে দুদকের আইনজীবী মোশররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘তাঁরা মামলার কার্যক্রম বিলম্বিত করতে এ আবেদন করেছে। দীর্ঘ ১২ বছর পর কেন এ আবেদন?’ এ আবেদনের শুনানির পর আদালত পরে এ বিষয়ে আদেশ দিবেন উল্লেখ করে বলেন, ‘এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু করেন।’
এরপর ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ তাঁর নিজের পক্ষে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, ‘যে ঘটনার প্রেক্ষিতে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে;সে ঘটনা ঘটেছে আওয়ামী-লীগ সরকারের ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে ক্ষমতা থাকাকালীন সময়ে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাইকোর সাথে চুক্তির অনুমোদন দিয়েছেন। আমরা কেবল ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তৎকালীন জ্বালানী সচিব তৌফিক এলাহী নাইকোর দুর্নীতি মামলায় প্রাথমিক অপরাধ করেছেন বলে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু তেঁজগাও থানায় এ বিষয়ে পৃথক মামলা করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।’
মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘আজ এ ঘটনায় তাঁরা কোথায়? তারা এখানে নেই কেন? মূল অপরাধীরা নেই;অথচ আমরা যারা সহযোগী তাদের ধরে এনে কাঠ গড়ায় দাঁড় করালেন। এটা খুবই হাস্যকর। অপরাধ করলে তারাই করেছে।’
এরপর মওদুদ আহমেদ শুনানি মুলতবির জন্য আবেদন করেন।
এ পর্যায়ে আদালত শুনানির পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন আইনজীবীদের সাথে খালেদা জিয়ার কথা বলার জন্য ১০মিনিট সময় আবেদন করেন। বিচারক এজলাস থেকে নেমে যাওয়ার পর খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও মাহবুব উদ্দিন খোকন কিছুক্ষণ কথা বলেন। এরপর খালেদা জিয়াকে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
খালেদা জিয়ারপক্ষে আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী,আবদুর রেজাক খান ও মাসুদ আহমেদ তালুকদার এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে মোশাররফ হোসেন কাজল শুনানিতে অংশ গ্রহণ করেন।
এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল শুনানির পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার নাইকোর সাথে চুক্তি করেননি। তবে তারা একটি গাইড লাইন দিয়েছিলেন। কিন্তু গাইডলাইনে যাচাই-বাছাই করার জন্যও বলেছেন। কিন্তু বিএনপি সরকার এসে সেখানে নাইকোর সাথে চুক্তি করে বিভিন্ন উপঢৌকনের বিনিময়ে।’
এর আগে গত ২১ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে অস্থায়ী আদালতে হাজির করা হয়। ওই দিন তাঁর উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী হান্নান ভূঁইয়া নাইকো দুর্নীতির মামলার তারিখের বিষয়ে এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন। গত ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর এ মামলায় খালেদা জিয়া আত্মপক্ষ সমর্থন করে জামিন নেন। এর আগে ২০১৭ সালের ১৮ জুন এ মামলাটি বিচারিক আদালতে চলবে বলে রায় দেন হাইকোর্ট।
মামলায় বলা হয়,২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম মামলা করেন।
পরবর্তী সময়ে, ২০০৮ সালের ৫ মে এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অভিযোগপত্রে আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।