দেশ ছাড়ছেন ব্লগাররা!
একের পর এক ব্লগার হত্যা, হামলা, হুমকির ঘটনায় চরম আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ব্লগাররা। এমন পরিস্থিতিতে হত্যার হুমকির মুখে অনেকে দেশ ছেড়েছেন। অনেকে আবার দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন। আবার অনেকে ঘর থেকে বের হওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন।
শনিবার ঢাকায় দুটি হামলার ঘটনায় আরো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নিহত লেখক অভিজিৎ রায়ের বইয়ের প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যার শিকার হয়েছেন। আরেক প্রকাশক এবং দুই লেখক ও ব্লগার হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন। এর পর থেকে শুধু ব্লগাররাই নন, আতঙ্কে রয়েছেন তাঁদের পরিবার-স্বজনরাও।
এ পরিস্থিতিতে দেশে থাকাটাই অনিরাপদ মনে করছেন হুমকির তালিকায় থাকা ব্লগাররা। গত এক বছরে দেশ ছেড়েছেন বেশ কয়েকজন লেখক-ব্লগার। নিরাপত্তাহীনতার কথা পুলিশকে জানিয়েও খুব একটা আশ্বস্ত হতে পারছেন না তাঁরা।
হুমকির মুখে কয়েক দিন আগে দেশ ছেড়েছেন গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক ও ব্লগার শাম্মী হক। তিনি বর্তমানে জার্মানিতে আছেন। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘জীবনের শঙ্কা নিয়েই দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছি।’
শাম্মী বলেন, ‘আমার দেশ ছাড়তে হবে, কোনোদিন ভাবিনি। আজ যখন আমার সহযোদ্ধারা মিছিল করছে, আমি এখানে (জার্মানি) বসে ছটফট করছি। কিন্তু আমি দেশে থাকলে আজই হতো আমার শেষ দিন। দুই মাস পুলিশি নিরাপত্তায় ছিলাম। পড়াশোনা, চাকরি, এমনকি হোস্টেলও ছাড়তে হয়েছিল। আমি দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। এই মৃত্যু উপত্যকা আমার সোনার বাংলা নয়।’
এর আগে দেশ ছাড়েন লেখক হুমায়ুন আজাদের ছেলে অনন্য আজাদ। তিনিও হুমকির মুখে গত জুলাইয়ে জার্মানি চলে যান।
দেশ ছাড়ার পর অনন্য আজাদও জানিয়েছিলেন, হুমকির মুখেই নিরাপত্তার অভাবে তিনি জার্মানি চলে গেছেন। কবে দেশে ফেরা হবে কিংবা আদৌ ফিরতে পারবেন কি না, সে বিষয়েও সংশয় তাঁর।
অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে দেশ ছেড়ে সপরিবারে জার্মানিতে আশ্রয় নেন তন্ময় কর্মকার নামের এক ব্লগার। জুলাইয়ে দেশ ছেড়েছেন সন্ন্যাসী রতন নামের আরেক ব্লগার। তিনি নরওয়ে গেছেন।
হুমকির মুখে গত মে মাসে দেশ ছাড়েন ব্লগার ও লেখক সৈকত চৌধুরী।
ব্লগার ক্যামিলিয়া কামাল ও সুব্রত শুভ আছেন সুইডেনে। ব্লগার মনির আছেন ফ্রান্সে। তাঁরা এ বছরই দেশ ছাড়েন।
২০১৩ সালে হামলার শিকার আলোচিত ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন বর্তমানে জার্মানিতে আছেন। হামলার পরপরই তিনি দেশে ছাড়েন।
দেশের বাইরে থাকা অবস্থাতেও কথা বলতে রাজি হননি অনেকেই। শুধু নিজের নয়, পারিবারিক সদস্যদের কথা ভেবেও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চান না তাঁরা।
২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন হত্যার মধ্য দিয়ে শুরু হয় ব্লগার হত্যাপর্ব। এর পর একে একে খুন হন আরো পাঁচজন ব্লগার-লেখক। এবার সেই কাতারে যুক্ত হলো প্রকাশকের নামও।
শনিবার জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক ফয়সল আরেফিন দীপন খুন হন। এর ঘণ্টাখানেক আগে লালমাটিয়ায় কুপিয়ে জখম করা হয় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর মালিক আহমেদুর রশীদ টুটুলকে। তাঁদের উভয়ের প্রকাশনী থেকেই প্রকাশ হয়েছিল নিহত ব্লগার অভিজিতের লেখা বই। টুটুলের ওপর হামলার সময় তাঁর সঙ্গে থাকা লেখক ও ব্লগার রণদীপম বসু, তারেক রহিমও গুরুতর আহত হন।