রিফাত হত্যাকাণ্ড : আরো দুজনের স্বীকারোক্তি
বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে এ মামলার ছয় নম্বর আসামি রাব্বি আকন ও সন্দেহভাজন অভিযুক্ত আরিয়ান শ্রাবণ।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ও রাতে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় তারা। পরে আদালত তাদের দুজনকেই জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে প্রথমে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় আরিয়ান শ্রাবণ। পরে সন্ধ্যায় তাকে জেলহাজতে নিয়ে যায় পুলিশ।
এরপর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় রিফাত হত্যা মামলার ছয় নম্বর আসামি রাব্বি আকন। পরে রাত সোয়া ১০টার দিকে স্বীকারোক্তি শেষে তাকেও জেলহাজতে নিয়ে যায় পুলিশ।
এ বিষয়ে রিফাত হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। এ ছাড়া এ মামলার এজাহারভুক্ত সাতজন ও তদন্তে বেরিয়ে আসা আটজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।’
এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১২ জন অভিযুক্ত রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এ মামলার দুজন অভিযুক্ত রিমান্ডে রয়েছে। আর গতকাল সকালে গ্রেপ্তার হওয়া এ মামলার ৩ নম্বর আসামি রিশান ফরাজীকে আজ শুক্রবার সকালে আদালতে হাজির করা হবে বলেও জানান হুমায়ুন কবির।
গত ২৬ জুন বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে নিয়ে বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে ফেরার পথে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ একদল যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালায়। তারা ধারালো দা দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। রিফাতের স্ত্রী আয়শা হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন; কিন্তু তাদের থামানো যায়নি।
খুনিরা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যায়। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিফাতের মৃত্যু হয়। এ হত্যার ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ পরের দিন বৃহস্পতিবার সকালে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় মামলা করেন।
গতকাল গ্রেপ্তার হওয়া রিশান ফরাজী রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ২ নম্বর আসামি রিফাত ফরাজীর ছোট ভাই। গত ২ জুলাই রিফাত ফরাজীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে পর পর দুবার রিমান্ডে নেয় পুলিশ। তাঁর স্বীকারোক্তির ভিত্তিতেই পুলিশ হামলার সময় ব্যবহৃত একটি রামদা বরগুনা কলেজের পাশের একটি খাল থেকে উদ্ধার করে।
এই চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি নয়ন বন্ড ২ জুলাই ভোরে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। মামলার এক নম্বর সাক্ষী রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকেও জিজ্ঞাসাবাদের পর গত মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, মিন্নি এই হত্যায় জড়িত ছিলেন।
যদিও মিন্নি গতকাল আদালতে দাবি করেছেন, তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত নন।
মিন্নি বর্তমানে পাঁচ দিনের পুলিশি রিমান্ডে রয়েছেন।